বিচ্ছেদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১:৫৬:৫৯ অপরাহ্ন
হাফিজুর রহমান
স্কুল ছুটির পর বাড়িতে এসে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল অপুর। খুব মহব্বতে লালন পালন করা পাঁচ জোড়া কবুতর, বাড়ির আঙিনায় মরে পড়ে আছে। পাঁচ জোড়া কবুতরের তিন জোড়া কবুতরেরই ছোটো-ছোটো বাচ্চা, ফুটানোর পনের দিনও হয়নি এখনও।
ঘরের চালে টাঙানো বাঁশের তৈরি খাঁচায়, ছানাগুলোর চেঁচামেচি করছে ওদের মায়ের জন্য, ছটফট করছে ক্ষুধার যন্ত্রণায়।
মায়ের কাছ থেকে অপু জানতে পারল, বাড়ির পাশে শস্য ক্ষেতের বীজতলা প্রস্তুতের জন্য, পোকামাকড় মেরে ফেলতে নাকি জমির মালিক, গমে বিষাক্ত বিষ মেখে প্রয়োগ করেছিল। কবুতরগুলো ওই জমিতে গিয়ে গম খেয়েছিল বলেই এমনই করুণ দশা। কোনরকমে উড়ে এসে আঙিনায় পড়েছে আর ছটফট করতে-করতেই মারা গেছে।
মায়ের কথা শুনে অপু, হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। মা ছেলের কান্নাকাটি সহ্য করতে না-পেরে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করতে বলে, যা হবার হয়েছে বাবা, চুপ কর। আমি তোমাকে আরও কবুতর কিনে এনে দিব, আবার তুই আগের মতো করেই লালন পালন করবি, কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ। চুপ কর, চুপ কর না বাবা, আর কাঁদিস না। আবার সবকিছু ঠিক আগের মতোই হয়ে যাবে। তাছাড়া কান্নাকাটি করে তো আর কবুতরগুলো ফিরত আসবে না। বাদ দে, যা হবার হয়েছে; আবার তুই নতুন করে শুরু করবি, আমিই ব্যবস্থা করে দিব যা টাকার প্রয়োজন হয় দিয়ে দিব।
এই কবুতরগুলো খুব মায়া-মহব্বতের ছিল অপুর। সকালে ও বিকালে নাস্তা খাওয়ার সময়, সবকটিই নিয়মিত এসে পড়ত ডাইনিং টেবিলে। একটি প্লেটে শুকনো খাবার দিত, ওরা টুকে-টুকে টুংটাং শব্দ তুলে খেত; একসাথে নাস্তা খেত অপু, খুব ভালো লাগত তার। প্রথম-প্রথম মা বকাঝকা করলেও পরবর্তীতে আর কিছু বলেনি কোনদিন, বরং পরিবারের সকলে, এতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল; অনুভব করতো অন্যরকম এক অনুভূতি।
ওই মূহুর্তগুলো মনে হলেই কান্না আটকাতে পারে না অপু, এর থেকেও বেশি কষ্টের বিষয় হলো, কবুতরগুলো বাচ্চা ফুটিয়েছে, ও-গুলোর কী হবে, কে কীভাবে ওদেরকে খাওয়াবে? বাচ্চাগুলোও হয়তো আর বাঁচবে না, খাবার খাওয়ানো মায়ের মৃত্যুর কারণে, ওরা হয়তো একদিন মরে পড়ে থাকবে, ছটফট করা ক্ষুধার যন্ত্রণায়।
কাঁদবে অপু, কাঁদাবে স্মৃতিগুলো, খুব সহজে মিলিয়ে যাওয়া মতো নয়, এ শোক।