ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী
ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলেই এগিয়েছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলেই এগিয়েছে। সামনেও এগিয়ে যাবে। আমার কাজ একটাই, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।
গতকাল শনিবার বিকেলে আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন শেষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে। এটি ঢাকার যানজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে। মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না। রাজধানীর সঙ্গে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের একটি নতুন উপহার আপনাদের জন্য দিয়ে যাচ্ছি। যেটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক।’
তিনি বলেন, ‘আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এদেশের মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সুযোগ তারা দিতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য তারা গড়তে চায়নি। স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ, এটা কখনো তারা চায়নি। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসি আমরা, এরপর জনগণের সেবা করতে শুরু করি। ২৯টা বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, কী দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে তারা। কিছু দিতে পারেনি, তারা শুধু নিজেরা লুট করেছে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের জন্ম অগণতান্ত্রিকভাবে তারা নাকি গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। তাদের সময়ে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশ অন্ধকারে ছিল। বর্তমানে সে অবস্থা নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ আলোর পথের যাত্রী। আমরা যে ওয়াদা করেছি সবগুলো পূরণ করেছি। আগামীতে এ দেশকে বাসযোগ্য করে যাব এ আমার অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে সড়ক, নৌ-পথ ও রেলপথের ব্যাপক উন্নয়ন করছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
কারো কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেতে হবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করেছি আমরা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন অন্ধকার যুগে নেই। সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ২০০৯ সালের পর থেকে দেশ উন্নত হয়েছে। আজ বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের যখন বয়স হয়ে যাবে। কর্ম অক্ষম হয়ে যাবে, তখন তারা যেন পেনশন পায়, সেজন্য পেনশন স্কিম চালু করে দিয়েছি।’
দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা নিজের একমাত্র কাজ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ একটাই, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আমরা যে ওয়াদা করেছি, তা পালন করেছি। কবি সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই, আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ অঙ্গীকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসার পরেই এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন শুরু হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করে গেছি। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সমগ্র উন্নয়ন কাদের স্বার্থে? জনগণের স্বার্থে। জনগণের জন্য আমরা উন্নয়ন করেছি, করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের খাবার নিজে খাবো, কারও কাছে হাত পাতব না। জাতির পিতা বলেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমাদের কারও কাছে হাত পাততে হবে না।’
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেউ বেকার থাকলে হবে না। কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে কিছু না কিছু করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা আন্দোলনের নামে রোজই আমাদের ক্ষমতা থেকে ফেলে দিচ্ছে, আমি তাদের বলবো- মেঘ দেখে করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলেই এগিয়েছে। উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে।’
এর আগে বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে টোল পরিশোধের মাধ্যমে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার গাড়িবহরে ২৫টি গাড়ি ছিল। গাড়িবহরের সবগুলো গাড়ির টোল পরিশোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি ২০০০ টাকা দেন। রাজধানীর কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে যান শেখ হাসিনা।
আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে সাধারণ যানবাহন উড়ালসড়কে চলাচল করতে পারবে। আর তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত বাকি অংশ আগামী বছরের জুনে চালু করার লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার।
দ্রুতগতির এই উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালসড়ক।
পুরো উড়ালসড়কে ৩১টি স্থান দিয়ে যানবাহন ওঠানামা (র্যাম্প) করার ব্যবস্থা থাকছে। র্যাম্পসহ উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। উড়ালসড়কে ১১টি টোল প্লাজা থাকছে। পুরো পথ চালু হলে তা যানবাহনে পাড়ি দিতে ২০ মিনিট লাগবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাওলা থেকে তেজগাঁও অংশ পাড়ি দিতে লাগবে ১০-১২ মিনিট।
শুরুতে উড়ালসড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকায়। সর্বশেষ ট্যাক্স, ভ্যাটসহ প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার কোটি ৭০ লাখ ৭ হাজার ১৫৩ টাকা।
বিদেশি বিনিয়োগে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় পরিবহন খাতে এটাই প্রথম প্রকল্প। সম্পূর্ণ এক্সপ্রেসওয়ে অর্থাৎ তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত আগামী বছরের জুনে চালু করার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।