প্রসঙ্গ : ‘শব্দ-সন্ত্রাস’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:৪৯:১৫ অপরাহ্ন
কথা বলারও একটা আর্ট আছে। সেটা আয়ত্ব না করলে অন্যকে আনন্দ দেওয়া যায় না। -মিচেল ব্রু।
শব্দ দূষণ আজকাল শুধু নাগরিক সমস্যা নয়, এটি এখন রীতিমতো সারা দেশেরই সমস্যা। যে হারে সর্বত্র শব্দের আগ্রাসন বাড়ছে, সেটাকে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ বলেই অভিহিত করছেন ভূক্তভোগিরা। শুধু যানবাহনের হর্ণ নয়-বিভিন্ন স্থাণে নির্মাণ কাজের মিক্সার মেশিন, মাইক বাজানো কিংবা কলকারখানার আওয়াজ থেকেও সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় শব্দ দূষণ।
দেশজুড়েই শব্দদূষণ এক নীরব ঘাতক। একে এখন জীবনবিনাশী শব্দ সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বিয়ে বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইকে গান বাজানো যেন একটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ দিবসগুলোতে সারাদিন-রাত ধরে উচ্চ শব্দে মাইক বাজালেও কেউ তার প্রতিবাদ করার সাহস পান না। আর শীতকাল এলেই বিভিন্ন এলাকায় নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো হয় উচ্চ শব্দে। ফলে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যানবাহনের হর্ণের কথা তো বলাই বাহুল্য। বাই সাইকেল থেকে শুরু করে সব ধরণের যানবাহনেই ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্ণ। আর সেগুলো বাজানো হয় অযথাই যেখানে সেখানে। দেশে প্রচলিত আছে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬।
বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। এছাড়া, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০ নম্বর ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। হাইকোর্ট ২০০২ সালের এক আদেশে সব প্রকার যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ও বিরক্তিকর হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। সরকারি বিধিমালায় আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কিন্তু সেটা মেনে চলা হচ্ছে না কেউই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এসব ব্যাপারে একেবারেই নীরব।
সবকিছু মিলিয়ে বিশেষজ্ঞগণ শব্দ দূষণকে শব্দ সন্ত্রাস বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ এটি সন্ত্রসী কর্মকা-ের চেয়ে আরও ভয়াবহ। দেশে বিভিন্ন কারণে উচ্চশব্দের উৎসগুলো যেমন বাড়ছে, তেমনি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও রয়েছে। শব্দ দূষণের কারণে মানবদেহে কানে কম শোনা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, অনিদ্রা, অমনযোগিতা, মানসিক সমস্যা, জলজ প্রজাতির প্রাণি ধ্বংস, উদ্ভিদের বৃদ্ধি হ্রাস, পশুর নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষতি, গর্ভস্থ বাচ্চা নষ্ট বা বধির হওয়া, পশুপাখির নিরাপদ আশ্রয় বিঘিœত হওয়াসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চাই, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন যথাযথ কার্যকরের মাধ্যমে শব্দ সন্ত্রাস থেকে জাতিকে উদ্ধার করা হোক।