বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৮:০৩ অপরাহ্ন
মিথ্যাবাদির শাস্তি এই নয় যে, তাকে কেউ বিশ্বাস করে না, সে নিজেই কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। -জর্জ বার্নার্ড’শ
বিদ্যালয়ে শিক্ষকের হাতে শিক্ষার্থীর নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, বাড়িতেও শিশুরা শাসনের নামে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন আছে, আদালতের নির্দেশনাও আছে। তবুও বন্ধ হচ্ছে না এই ‘অপকর্ম’। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের এমন নির্মম আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবক সবাইকেই নির্যাতন করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।বিশেষ করে, প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুল-মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়। এই ধরণের সব খবর মিডিয়ায় আসছে না। অতি সম্প্রতি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে শিক্ষকের প্রহারে আট বছরের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর লাশ হাসপাতালে রেখে মাদ্রাসা শিক্ষকের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যতো অন্যায়ই একজন শিক্ষার্থী করুক না কেন, তার শাস্তি এ রকম হতে পারে না। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধ করতে সরকার ২০১০ সালে একটি পরিপত্র জারি করে। দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু অধিকার সংরক্ষণ ও শিশুদের মানসিক বিকাশে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর। দেশের প্রচলিত নারী নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ আইন অনুযায়ি শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থী নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া, জাতিসঙ্ঘ শিশু অধিকার সনদে শিশুর ওপর নির্যাতন বা নৃশংসতা, অমানবিক, মর্যাদাহানিকর আচরণ বা নির্যাতন না করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশ্বের সব দেশেই শিক্ষার্থী নির্যাতন আইনত নিষিদ্ধ। আর বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এ শব্দগুলোর সাথে নির্যাতন নামক কোন শব্দই জড়িত থাকা উচিত নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয়, অন্য দিকে ছাত্রছাত্রীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তাই যেভাবেই হোক সভ্য জাতি গড়ার অঙ্গনে এধরণের অসভ্যতা বর্বরতা রুখতে হবে।