এক বছরের মাথায় আবারো সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দুর্ঘটনা
মিরাবাজারে বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিস্ফোরণে পথচারীসহ দগ্ধ ৯
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৪২:১০ অপরাহ্ন
# ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক # জেলা প্রশাসনের ৯০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা
স্টাফ রিপোর্টার: এক বছরের মাথায় সিলেটে আবারো সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিলেট নগরীর মিরাবাজারস্থ দাদা পীর মাজার সংলগ্ন বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে কম্প্রেসার কক্ষের একটি সেফটি বাল্ব বিস্ফোরণে পথচারীসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন- রিপন (৩৪), লুৎফর (৩২), রুমেল (২৮), মিনহাজ (২৭), বাদল দাস (৪২), রামিম (১৮), রুমান (২৩), তারেক (৩০) ও মুহিন (৪৫)। আহতদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয়দের অভিযোগ বন্ধ থাকার সময়েও বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিভিন্ন গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। ঘটনার সময়ও একটি গাড়িতে গ্যাস লোড হচ্ছিলো। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গ্যাস পাম্প মালিক নেতা জুবায়ের আহমদ চৌধুরী। তিনি দাবি করেছেন, তখন পাম্প বন্ধের সময় থাকলেও কমপ্রেসার মেশিন লোড নেয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে গত বছরের ১৫ জুলাই রাত ১০টার দিকে সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সফাত উল্লাহ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে একই রকম দুর্ঘটনায় দুই কর্মচারীর প্রাণহানি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, পাম্প বন্ধের সময়েও খোলা ছিলো বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফিলিং স্টেশনটির কম্প্রেসার কক্ষের একটি সেফটি বাল্ব বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এসময় কম্প্রেসার মেশিনসহ আশপাশের যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরে যায়। এতে ৯ জন মুহূর্তেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে পড়েন। আহতরা বিরতি’র কর্মচারী ও তেল-গ্যাস নিতে আসা কয়েকজন। এ অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে দ্রুত সিলেট তালতলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ১৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
এদিকে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয়রা জানান, বিকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পেট্রোল ও সিএনজি পাম্প বন্ধ থাকার নির্দেশ থাকলেও বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ সরকারি আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেক সময় বাতি নিভিয়ে গাড়িতে তেল-গ্যাস বিক্রি করে। ঘটনার সময় শব্দ হয়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় পুরো এলাকা।
এ বিষয়ে বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক আখতার ফারুক লিটনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস্ এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জুবায়ের আহমদ চৌধুরী দাবি করেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে সিএনজি স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর এক ঘণ্টা কমপ্রেসারের লোড দেয়া লাগে। তিনি দাবি করেন লোড দেয়ার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি অগ্নিকান্ড নয়, যারা আহত হয়েছেন সকলেই অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে আহত হয়েছেন। আর যারা দগ্ধ হয়েছেন সেখানে গরম মবিলে মূলত তারা দগ্ধ হন। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তার আশা।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার বেলাল আহমদ বলেন, তাদের দুটি ইউনিট ১০-১৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত করে বলতে হবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম) বলেন, এ ঘটনায় ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে এক বছরের মাথায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দুর্ঘটনার ঘটনায় আঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। গত বছরের ১৫ জুলাই রাত ১০টার দিকে নগরীর কুমারগাঁওয়ে সফাত উল্লাহ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অনুরূপ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধ হওয়া চার জনের মধ্যে দুই জন মারা যান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন-সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার নুরুল হক ও সিলেট কুমারগাঁও এলাকার সালেহ আহমদ। তারা দুজন সফাত উল্লাহ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনার পর অনুরূপভাবে ঘটনাটি খুব সামান্য বলে চালিয়ে দেয় হয় এবং পরবর্তীতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে, বিরতি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সিলেট ইমরুল হাসান অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশন পরিদর্শন করেন এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চিকিৎসারত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন। এসময় জেলা প্রশাসন সিলেট কর্তৃক অগ্নিদগ্ধ ৯ পরিবারের প্রত্যেককে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে মোট ৯০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। এডিসি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে তাদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।