শমসেরনগর বিমানবন্দর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫৭:৫২ অপরাহ্ন
অসৎ লোক কাউকে সৎ মনে করে না। সকলকেই সে নিজের মতো ভাবে। -হজরত আলি রা.
সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসংখ্যবার আশ্বাস দেয়া সত্বেও চালু হচ্ছে না শমসেরনগর বিমানবন্দর। অযতেœ অবহেলায় পড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহি বিমানবন্দরটি। বিশাল পরিসর, প্রশস্ত রানওয়ে, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর সুবিধা থাকা সত্বেও চালু হচ্ছে না এটি। অথচ বিমান বন্দরটি চালু হলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি মৌলভীবাজার তথা সিলেট বিভাগের মানুষের যোগাযোগ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
মৌলভীবাজার থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শমশেরনগর বিমানবন্দর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারি তৎকালীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও দেশের বৃহত্তম এ বিমান বন্দরটি সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। জানা যায়, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, মালয়েশিয়া, বার্মা ও ইন্দোনেশিয়াকে দখল করার উদ্দেশে বৃটিশরা একসঙ্গে বড় যে দু’টি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছিলো, তার একটি হচ্ছে কমলগঞ্জের শমসেরনগর বিমানবন্দর। তখন বিমান বন্দরটির নামকরণ করা হয় ‘দিলজান্দ বন্দর’। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়- ‘শমসেরনগর বিমানবন্দর’। শমসেরনগর চা বাগানের ৬শ ২২ একর জমি অধিগ্রহণ করে নির্মিত হয় এ বিমানবন্দরটি। বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট ও প্রস্থ ৭৫ ফুট। ১৯৬৮ সালে একটি দুর্ঘটনার পর সেখানে বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া, ১৯৭০ সালে পিআইএর অভ্যন্তরীণ একটি ফ্লাইট সিলেট বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শমসেরনগর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণকালে রানওয়ের কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বিমান বন্দরের সৈনিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে বিমান বন্দরে অনেকগুলো বাংকার ও টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। পাকিস্তান আমল এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এগুলো অক্ষত ছিলো। এই পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে ১৯৭৫ সালে বিমান বাহিনীর একটি ইউনিট খোলা হয়। পরবর্তীতে এখানে বিমান বাহিনীর একটি পরীক্ষণ স্কুল চালু করা হয়। তখন থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ি বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার ওঠানামা করছে। বর্তমানে বিমান বন্দরের রানওয়েসহ বিভিন্ন নিদর্শন ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, বিমানবন্দরের অবহেলিত ও পতিত ভূমি ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কৃষি খামার। এখানে বিমানবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট অফিসও খোলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসি অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রিসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এই বিমানবন্দরের সামরিক গুুরুত্বও রয়েছে। বিমান বন্দরটি চালু হলে এটিকে কেন্দ্র করে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠবে ও এ এলাকার যাত্রিদের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে।