সরকারি অফিসে ভোগান্তি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৪:১১:৫৩ অপরাহ্ন
ভবিষ্যৎকে জানার জন্যই আমাদের অতীত জানা ইচিৎ। -জন ল্যাক হন
সরকারি অফিসে জনভোগান্তি নতুন কিছু নয়। দিন দিন এই ভেগান্তির মাত্রা বেড়েই চলেছে। সরকারি অফিসে ঘুষের ছড়াছড়ি। ঘুষ ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না। ঘুষ ছাড়া যেন কেউ কথাই বলতে চায় না। কোন কাজ হয় না ঘুষ ছাড়া। আবার অনেক সময় ঘুষ দিয়েও কাজ আদায় করা যায় না। বাড়ছে সেবাগ্রহিতাদের হয়রানি। আছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূর্ব্যবহার। অনেক দপ্তরে এখন মানুষ কোন কাজের জন্য যেতে সাহস পায় না। হয়রানির ভয়ে অনেকে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে ইপ্সিত কাজটি সম্পাদন করেন।
দিনের পর দিন সরকারের বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরে জনভোগান্তি বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিটি সরকারি দপ্তরই স্বার্থান্বেষী মহলের নিয়ন্ত্রণে। একশ্রেণির আমলা-কর্মচারির ঘুষের টাকায় পকেট ভরা অত্যন্ত সহজ একটা বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অতীত থেকেই আমাদের দেশের মানুষ এমন পরিস্থিতির শিকার। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, সেটা বলাই বাহুল্য।আর তার প্রধান কারণ হলো, সমাজে অনিয়ম, অনাচার, দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। দুর্নীতিবাজরা পুকুরচুরি করেও এখন পার পেয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের টাকা মেরে দেওয়া থেকে শুরু করে অফিসে বসে ঘুষ খাওয়া, সরকারি সম্পদ লুট-এ সবই এখন একটি কালচারে পরিণত হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কমবেশি ঘুষ-দুর্নীতি আছে। এটা নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নেতৃত্ব বজায় রাখতে অনেক সময় সমঝোতা, ছাড়, কমিশন, খুশি রাখা ইত্যাদি পথ অবলম্বন করা হয়। ফলে নীতিহীন অযোগ্য নেতৃত্বের প্রবেশাধিকার অবাধ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে এটা আরো প্রকট। এদের প্রধান লক্ষ থাকে অল্প সময়ে অধিক সম্পদের মালিক হওয়া। এদেরই আশ্রয়-প্রশ্রয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিবৃন্দ অবাধে দুর্নীতি করার সাহস পায়। সরকারি অফিসে একেবারেই সৎ বা ভালো মানুষ যে নেই, তা নয়। কিন্তু আনুপাতিক হারে তাদের সংখ্যা অত্যন্ত কম। ফলে এসব ব্যক্তির প্রচেষ্টা সেখানকার কর্মকা-ে কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারছে না। যে সৎলোকের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে ঘুষখোর-লুটেরার দল, সেই সৎলোকের পক্ষে ভালো কাজ করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। বরং সেই সৎ ব্যক্তিকে কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে থাকতে হয়। তাদের কাজের সুফলও জনসাধারণ পায় না। তারা কোনমতে চাকরির মেয়াদ পার করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা মাথায় রেখেই দিন কাটায়।
সবচেয়ে বড় কথা, ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ চক্রের অপকর্মের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। বছর কয়েক আগে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল নজীরবিহীন ঘটনা। সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, বেতন ভাতা বৃদ্ধি করলে সরকারি অফিসে দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটলো উল্টো। দুর্নীতিবাজরা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, তারা সরকারি চেয়ারকে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে, সেটা হতে পার না। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করা এ দেশটি আজ কোন ব্যক্তি বা শ্রেণির হীনস্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হয়ে থাকুক, সে অবস্থাটি আর একদিনও চলতে দেওয়া উচিত নয়।