কোম্পানীগঞ্জে হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:০৭:১৯ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের অদূরে রাউটি বিল। পাশেই পিয়াইন নদী ও মাঠ। এর সামান্য পশ্চিমে মহাসড়ক দিয়ে গেলেই চোখ আটকে যায় হাঁসের দলে। ঝাঁকে ঝাঁকে হাঁস বেড়ায় উন্মুক্ত জলাশয়ে। এ-এক অপূর্ব দৃশ্য। এই হাঁসই বেকারত্ব ঘুচিয়ে অনেকের পরিবারে এনেছে স্বচ্ছলতা।
তাঁদের একজন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গৌখালেরপাড় গ্রামের মানিক। পিয়াইন নদীর তীরে মানিকের রয়েছে হাঁসের খামার। তাতে আছে ৬০০ হাঁস। হাঁসগুলো তাঁর পরিবারে এনেছে স্বচ্ছলতা। তিনি এগারো বছর ধরে হাঁসের খামারের সঙ্গে জড়িত।
মানিকের পাশের খামারটি একই গ্রামের জাহেদের। ৬০০ হাঁস তাঁর খামারেও। তিনি হাঁস পালেন আট বছর ধরে। জাহেদের ভাই খালেদ জানান, গৌখালেরপাড়ে তাদের সাতটি খামার। এগুলো তাদের ছয় ভাইয়ের। খামারগুলোতে প্রায় ৭ হাজার হাঁস রয়েছে। হাঁস তাদের অভাব দূর করেছে। সংসারে এনে দিয়েছে সুখ ও সমৃদ্ধি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সফল খামারি দম্পতি ঢালারপাড় গ্রামের কামরুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম। বাড়ির নিকটেই হাওরে তাদের দুটি হাঁসের খামার। খামারি দম্পতির আট সদস্যের সংসার। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও সংসার খরচ চালিয়েও বেশ সঞ্চয় করতে পারছেন তাঁরা। তাদের সাফল্যের গল্পের শুরু ২০০৪ সালে। মাঝখানে যুক্ত হন পাথরের কারবারে। ২০১৮ সালে পাথর কোয়ারি বন্ধ হয়ে গেলে আবার শুরু করেন হাঁস পালন। বর্তমানে তাদের খামারে ২২০০ হাঁস। বছরে আয় হয় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
রাজারখাল গ্রামের আশ্রব আলী জানান, তিনি ছয় বছর বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। বিদেশি কর্মস্থলে পরিশ্রম করে যা পেতেন, তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলতো। হাঁস পালন সাচ্ছন্দ্য এনেছে পরিবারে। ২০১৮ সালে ১১৩টি হাঁস দিয়ে শুরু। এখন তাঁর খামারে ১৮৫০ হাঁস।
ইছাকলস ইউনিয়নের কলাপাড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন প্রতিবছর বৈশাখে ১ হাজার হাঁসের ছানা দিয়ে শুরু করেন। ভাদ্র মাসে পরিণত বয়স হলে বিক্রি শুরু করেন। প্রতি জোড়া পাইকারি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। হাঁস পালন ছাড়াও তিনি কৃষি কাজ করেন। চার ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। তাদের পড়ালেখা ও সাংসারিক খরচ মেটাতে কোন সমস্যা হয় না।
এদিকে, গৌখালেরপাড়ের মানিক, জাহেদ, খালেদ, ঢালারপাড়ের কামরুজ্জামান দম্পতি, রাজারখালের আশ্রব আলী কিংবা কলাপাড়ার জসিম ছাড়াও হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে কোম্পানীগঞ্জের শতাধিক পরিবার। উপজেলার বেশিরভাগ হাঁসের খামারই হাওর কেন্দ্রিক। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি। তাই হাঁসের খামারে ঝুঁকছেন অনেকে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, তালিকা অনুযায়ী কোম্পানীগঞ্জে ৭০টি হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে অন্তত এক লাখের অধিক হাঁস রয়েছে। যা থেকে গড়ে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করে উপজেলার অনেকেই সংসারে আয় বাড়িয়েছেন। বেকারত্ব দূর করেছেন। হাঁসের খামার প্রসারে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।