শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি বৈঠক
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৩৩:১৩ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজ বাসভবনে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) এ কথা জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এদিকে, রাতে দিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও সে সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে জানান, ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা’র বিষয়টি বৈঠকে খুবই গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইস্যু যেটা, সেটা হল আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। আমরা বারবার এই কথাটা বলছি, ভারতও একই কথা বলছে।’
‘এই জিনিসটা নষ্ট হলে আমাদের উভয় দেশে তো বটেই, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতেই তার প্রভাব পড়বে। আমরা এই কথাটা বৈঠকে বলেছি, ভারতও তার সঙ্গে একমত হয়েছে’, জানান ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অনুরোধ রাখতেও প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অনুরোধ জানিয়েছেন বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়েও বৈঠকে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আদানপ্রদানের লক্ষ্যে এবং রুপি ও টাকায় বাণিজ্যিক লেনদেনের পথ প্রশস্ত করতে বৈঠকে তিনটি ‘মউ’ বা সমঝোতাপত্রও স্বাক্ষরিত হয়েছে। যেগুলোর কথা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল।
বৈঠকের পর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি পদস্থ সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে অত্যন্ত ‘আন্তরিক, খোলামেলা ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে’।
ওই বৈঠকে আরও একবার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার ‘পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও মৈত্রীরই প্রতিফলন ঘটেছে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ঠিক এক বছরের ব্যবধানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হল।
নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার মধ্যে শেষ ‘ইন-পার্সন’ বৈঠক হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে, যখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছিলেন।
আর এই বৈঠক হল এমন একটা সময়ে যখন বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র তিন বা সাড়ে তিন মাস বাকি।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনকে যেহেতু খুব জোরালো একটা ফ্যাক্টর বলে মনে করা হয়, তাই সে দেশে নির্বাচনের ঠিক আগে দু’জনের এই বৈঠকের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তাৎপর্যও ছিল অপরিসীম।
এই পটভূমিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা (পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি) রক্ষায় ভারতের দৃঢ় সমর্থন ও সাহায্যের অঙ্গীকার অক্ষুণœ থাকবে ভারত বৈঠকে এই আশ্বাস দিয়েছে বলে বিবিসি উল্লেখ করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৮-১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লি পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১টায় নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর, ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত’-এর অধীনে দুটি ভাষণ দেবেন।
১০ সেপ্টেম্বর, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং শেষ দিনে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সাথে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এরপর সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেবেন তিনি। সম্মেলনের শেষ দিনে ‘জি- ২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা’ গৃহীত হবে। ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন।