আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩:১১ অপরাহ্ন
মানুষ যা লাভ করেছে, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে সুন্দর স্বভাব। -আল হাদিস
প্রতি বছর গড়ে দশ হাজার মানুষ বিষ খেয়ে বা ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করছে। আর দিন দিন এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা। এই বিষয়ে চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত, হতাশাই হচ্ছে আত্মহত্যার মূল কারণ। হতাশাগ্রস্ত মানুষের মনে সমাজ সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সে হয়ে পড়ে জনবিচ্ছিন্ন। নিজেকে এই সমাজে অপাংক্তেয় মনে হয় এবং বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। তবে সামাজিক সচেতনতা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই প্রবণতা দূর করা যায়। আর এই সচেতনতা সৃষ্টির আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে আজ দেশে পালিত হচ্ছে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আত্মহত্যা এক ধরনের মানসিক রোগ। জগৎ সংসারে হাসি-খুশি, সুখ-দুঃখ আর কর্ম দিয়ে বেঁচে থাকে মানুষ। এটা হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। কিন্তু এই স্বাভাবিক জীবনের পেছনেই রয়েছে অনেক না বলা কথা, না দেখা ঘটনা। হয়তো মানুষের অজান্তে অগোচরে ঘটে চলেছে এইসব কিছু। কিন্তু সেই মানুষ নিজেই তা জানেনা, বুঝে না। সময়ের ব্যবধানে সেই সব ঘটনা প্রবাহে মানুষের নিজের কাছে নিজেকেই অচেনা মনে হয়। নিজেকে মনে হয় অর্থহীন। নিজের ওপর চরম বিরক্তি নেমে আসে। আর এরই পরিণতি হচ্ছে আত্মহত্যা। এই প্রবণতা অতীতেও ছিলো, আছে এখনও। তবে অতীতে আত্মহত্যার ঘটনা শোনা যেতো কস্মিনকালে একটি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। তাছাড়া, অনেক আত্মহত্যার ঘটনা মিডিয়াতেও আসছে না, লোকলজ্জার ভয়ে অনেক পরিবার এই ধরনের ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছে। আত্মহত্যার প্রবণতা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বে বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে রীতিমতো ‘মহামারি’ আকারে রূপ নিয়েছে এই প্রবণতা। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যা করে প্রায় দশ লাখ মানুষ। যুদ্ধ ও খুনের শিকার হয়েও প্রতিবছর এতো মানুষের মৃত্যু ঘটে না। আত্মহত্যা প্রবণ ও আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় এর চেয়ে ১৫/২০ গুণ বেশি মানুষ। নানা কারণে আত্মহননের পথ বেছে নেয় মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে হতাশা, বিষন্নতা, নেশাগ্রস্ত হওয়া, সিজোফ্রেনিয়াসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, গুরুতর আর্থিক সমস্যা, নিঃসঙ্গতা, বার্ধক্য, প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া, দাম্পত্যকলহ, যৌতুক, ইভটিজিং ইত্যাদি। তবে আত্মহত্যার জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগই হচ্ছে বিষন্নতা। বিষন্নতায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ শতাংশই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জটিল মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে আত্মহত্যার হার দশ শতাংশ। মাদক বহনকারীদের মধ্যে দশ থেকে ২০ শতাংশই আত্মহত্যা করে।
তবে সবচেয়ে বড় কথা যারা আত্মহত্যা করে তারা হয়তো আপাতদৃষ্টে জীবন যন্ত্রণা থেকে বেছে যাচ্ছে, তবে আত্মহত্যার পরে পরিবার ও সমাজে এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ মানসিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া থেকে যায়। এই ‘সামাজিক ব্যাধি’ নিরসনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি। এ জন্য প্রয়োজন অভিভাবকদের সচেতনতা। যারা আত্মহত্যা করছে তারা বেশির ভাগই বয়সে তরুণ, তাই তাদের মধ্যে মানসিক চাপ-বিষন্নতা যাতে জন্ম না নেয় সেটা দেখতে হবে অভিভাবকদের। সর্বোপরি সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সব ধরনের প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করার মানসিক শক্তি থাকা উচিত সকলের মধ্যে। আর এই শক্তি অর্জন করলে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে না।