মরক্কোয় ভূমিকম্পে নিহত সহস্রাধিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৪:১১:৪২ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : তীব্র শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে মরক্কোর মধ্যাঞ্চল। যতদূর চোখ যায়, শুধু ধ্বংসস্তূপ। তার পাশে অসহায়ের মতো আর্তনাদ করছেন সব হারানো মানুষজন। শুক্রবার দিনের শেষের দিকে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভয়াবহ ভূমিকম্পে সেখানে সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে হাজার ছাড়িয়েছে। এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে মৃতদেহ। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। তাদের পরিণতি কী হয়েছে তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। সবখানে ভবন ধসে পড়েছে। বড় শহরগুলোর মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে খোলাস্থানে।
এদিকে, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৩৭-এ পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নিহতের বর্তমান সংখ্যা প্রাথমিক পর্যায়ের। এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন পাহাড়ি অঞ্চলে। সেখানে পৌঁছানো খুবই দুরূহ ব্যাপার হয়ে গেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মারাকেচ শহরের কাছেই ছিল এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল। সেখানকার বাসিন্দারা বলেছেন, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনা পুরনো একটি শহরের ভবনগুলো ধসে পড়েছে। স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে মসজিদের একটি মিনার ভেঙে পড়েছে বিধ্বস্ত গাড়ির ওপর। প্যান আরব আল এরাবিয়া নিউজ চ্যানেল রিপোর্ট করেছে যে, একই পরিবারের ৫ জন সদস্যের সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, ভূমিকম্প আঘাত করেছে আল হাউজ, ওউরজাজাতে, মারাকেচ, আজিলাল, চিকাউয়া এবং তারোডান্ট প্রদেশে।
ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছের পাহাড়ি গ্রাম আসনির একজন বাসিন্দা মন্টাসির ইতরি বলেছেন, তাদের গ্রামে যেসব বাড়িঘর ছিল তার বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। অধিবাসীরা এসব ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। তাদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু গ্রামগুলো দুর্গম হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছতে পারছেন না তারা। আরো পশ্চিমে তারোডান্টের বাসিন্দা শিক্ষক হামিদ আফকার।
তিনি বলেন, বাড়ি থেকে কোনোমতে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। প্রাথমিক কম্পনের পর বার বার সেখানে ভূমিকম্প হচ্ছিল। প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে কম্পন হয়েছে। একা একাই ঘরের দরজা খুলে গেছে। আবার বন্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় দৌড়ে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় চলে আসি।
মরক্কোর জিওফিজিক্যাল সেন্টার বলেছে, শক্তিশালী ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প উঁচু এটলাস বা পাহাড়ি এলাকায় আঘাত করেছে।
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৮ বলে শনাক্ত করেছে। এর গভীরতা ছিল ১৮৫ কিলোমিটার। পাহাড়ি ইঘিল এলাকা একটি কৃষিনির্ভর ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম। মারাকেচ থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ভূমিকম্প আঘাত হানে।
ওদিকে, মারাকেচে অনেক বাড়ি ধসে পড়েছে। জনগণ খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করছিলেন। মধ্যযুগীয় এই শহরের ফুটেজে দেখা যায়, একাংশে বিশাল ফাটল ধরেছে। রাস্তায় রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ। মারাকেচের আরেকজন বাসিন্দা ব্রাহিম হাম্মি বলেন, ওল্ড
টাউন থেকে এম্বুলেন্স যেতে দেখেছেন তিনি। বহু ভবন ধসে পড়েছে। লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ভবনের সিলিং থেকে সব ধসে পড়ছিল।
৪৩ বছর বয়সী হুদা হাফসি বলেন, আমি বাচ্চাদের নিয়ে উন্মাদের মতো এদিক-সেদিক দৌড়াচ্ছিলাম। দালিলা ফাহেম নামে একজন নারী বলেন, তার বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরের আসবাবপত্রের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ইঘিল থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার উত্তরে রাবাত। সেখানকার এবং ইমসোউনে উপকূলীয় শহরের মানুষও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে ভয় দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন আরও ভূকম্পন হবে।
এদিকে মরক্কোতে যেন মানবিক সহায়তা পাঠানো সহজ হয়, সে জন্য আলজেরিয়া তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ¦ চলার পর ২০২১ সালে আলজেরিয়া মরক্কোর সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে ভূমিকম্পের পর আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম মরক্কান মানুষকে সহায়তার জন্য’ তারা মানবিক সহায়তা ও লোকবল সরবরাহ করতে প্রস্তুত।
এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং মরক্কোকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখ্রোঁ জানিয়েছেন, তার দেশ মরক্কোকে ‘প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত’। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তার দেশ সহায়তার জন্য প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিসের এক বার্তায় বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ‘মরক্কোর মানুষকে সকল প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ’ দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি এক্সে মন্তব্য করেছেন, ‘যুক্তরাজ্য সম্ভাব্য সকল পন্থায়’ মরক্কোকে সহায়তা করবে। এ ছাড়াও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজসহ বিশ্বনেতারা সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
ভৌগোলিক অবস্থানের হিসাবে মরক্কো আফ্রিকা আর ইউরোপের মধ্যে রয়েছে। আফ্রিকা ও আরববিশ্বের ওপর এই দেশটির প্রভাব রয়েছে। আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের উপকূল রয়েছে এই দেশটির সঙ্গে। দেশটির মধ্যে রুক্ষ পাহাড়ও রয়েছে এই দেশের সংস্কৃতিতে আরব, বেরবার, ইউরোপীয় ও আফ্রিকান প্রভাব রয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ এবং আয়তন প্রায় সাড়ে চার লাখ বর্গকিলোমিটার।