খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:১৮:৫৮ অপরাহ্ন
আলস্য মানুষের প্রধানতম শত্রু।এই শত্রুকে পরাজবত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। -স্বামী বিবেকানন্দ
স্বাস্থ্যসম্মত ও সুশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাসের বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞাণিগণ বহুদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন। তাদের মতে, বিশ্বজুড়ে মানুষের ‘বিশৃঙ্খল’ খাদ্যাভ্যাসের কারণে অচিরেই মানবসভ্যতা ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে। খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে মানবদেহের পুষ্টি সাধিত হয়। তাই সুস্থ জীবনের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাছাড়া, অতীতে আমাদের দেশে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে ‘ভাতের ওপর চাপ কমান, বেশি করে আলু খান’ এ রকম একটা স্লোগান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। সব মিলিয়ে সময়, স্থান ভেদে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্যচাহিদা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতি বছরই নানা কারণে কৃষিজমি কমছে। এই অবস্থায় কৃষক ও কৃষিবিজ্ঞাণিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এক সময় গরিব মানুষের খাবারের মূল উপাদান ছিল গমের আটার রুটি, আর সচ্ছল মানুষ ভাত খেতো। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মানুষের সামর্থ্য বেড়েছে। ভাতের ওপর নির্ভরশীলদের সংখ্যা বেড়েছে। সেইসঙ্গে বর্তমানে স্বাস্থ্যসচেতনতা, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব, রুচির পরিবর্তনের কারণে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এসেছে।আর গবেষকরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সেই হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা হবে এক হাজার কোটি। এখনই সবার খাদ্যাভ্যাস না বদলালে এতো বিপুলসংখ্যক লোককে স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই খাবারের জোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই খাদ্যাভ্যাসের দিক দিয়ে দুনিয়াজুড়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদন বলছে, দেশের মানুষের মাঝে খাদ্য গ্রহণে পরিবর্তন এসেছে। ভাতের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমেছে। তবে মোট খাদ্যগ্রহণের হার সামান্য বেড়েছে। অন্যদিকে ডাল, শাকসবজি, মাংস ও ফল খাওয়ার পরিমাণও বেড়েছে। তারপরেও বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ গ্রাম ভাত খায়। সেখানে পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ ২০০ গ্রামের বেশি ভাত খায় না।
সব মিলিয়ে সুস্থ থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি। গবেষকেরা দাবি করেছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় এক কোটি দশ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমাদের দেশেও ভাতের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ধীরে ধীরে আলু বা অন্য কোনো ধরনের শর্করাজাতীয় খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হতে হবে। সেইসঙ্গে প্রধান খাদ্য হিসেবে দেশের জনগণ ভাত, আলু বা অন্য যা কিছু গ্রহণ করুক না কেন, তা থাকতে হবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ক্রয়সীমার মধ্যে।