জমির মালিকানা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১:৪৯:১৯ অপরাহ্ন
হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় একটি মাত্র পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে। -লাও ঝু
ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। দখলে থাকলেই মালিক নয়, থাকতে হবে দলিলসহ জমির প্রয়োজনীয় দস্তাবেজ। অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনও জমির অংশ বিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তরে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রেখে এই নতুন আইনটি করা হচ্ছে। এব্যাপারে একটি বিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে সম্প্রতি। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল ২০২৩ নামের এই বিল উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী।
ভূমি নিয়ে নানা ধরণের সমস্যা এদেশে নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভূমি বিষয়ক জটিলতা। দেশের আদালতগুলোতে যতো মামলা বিচারাধীন তার বেশিরভাগই ভূমি সংক্রান্ত। সংবিধান অনুযায়ি রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ ও হস্তান্তরের অধিকার রয়েছে। অথচ ভূমি সেবায় প্রতি ধাপেই অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভূমি সংক্রান্ত সেবা কার্যক্রমে ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারিদের সঙ্গে যোগসাজশে সম্পত্তি আত্মসাৎ, রাজনৈতিক প্রভাব, ভোগদখলসহ এ খাতে চলছে লাগামহীন দুর্নীতি। রয়েছে ভূমি জরিপের সময় জরিপকর্মির জমির পরিমাণ কম দেখানো ও খতিয়ানে ভুল তথ্য লেখার ভয় দেখিয়ে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া, ঘুষের বিনিময়ে খাসজমি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলকারি ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড প্রস্তুত, তহশিল অফিসে ঘুষের বিনিময়ে নামজারির প্যাকেজ নির্ধারণ ইত্যাদি অভিযোগ। এই ধরণের অনাচার চলে আসছে বছরের পর বছর। ভূমি সংক্রান্ত অফিসগুলোতে দুর্নীতিবাজ চক্র নিরীহ মানুষদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। এইসব হয়রানি লুটপাট বন্ধ করতেই সরকার প্রণয়ন করতে চাচ্ছে নতুন আইন। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে- ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখা, ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষে এই আইন করা হচ্ছে। নাগরিকদের নিজ নিজ মালিকানার ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল অধিকারগুলো নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের লক্ষে এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সময় পাল্টাচ্ছে। যুগের পরে যুগ ধরে চলে আসা হয়রানি ও ভোগান্তির অবসান হওয়া এখন জরুরি। ভূমি নিয়ে যে অনিয়ম দুর্নীতির চক্র গড়ে ওঠেছে, সেটা নিশ্চিহ্ন করার সময় এসেছে। সময় এসেছে দেশব্যাপি বিভিন্ন আদালতে ভূমি সংক্রান্ত ১৮ লাখের বেশি মামলার যে জট লেগেছে, তার নিরসর হওয়ার। জোরজবরদস্তির মাধ্যমে জমির মালিকানা দাবি নয়, বরং বৈধ কাগজপত্র যার আছে সে ই জমির মালিক। এই বিষয়টি নিশ্চিত করাই হচ্ছে নতুন আইনের লক্ষ। আইনটি কার্যকর করা সবচেয়ে জরুরি।