পুড়ছে উর্বর মাটি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন
সফল মানুষেরা কাজ করে যায়। তারা ভুল করে, ভুল শোধরায়-কিন্তু কখনও হাল ছাড়ে না। -কনরাড হিলটন
কৃষিজমির মাটি পুড়ছে ইটভাটায়। জমির উপরিভাগের উর্বর মাটিই ব্যবহৃত হচ্ছে ইট তৈরিতে। এভাবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি বা টপ সয়েল অপসারণ করে কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কাজে এই জমি ব্যবহার করলে এর পুনর্গঠনে এক থেকে দুই শতাব্দি পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
জানা যায়, ভূপৃষ্ঠদেশের মাটি বা টপ সয়েল উপরিতল থেকে পৌনে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বিস্তৃত। টপ সয়েল মাটির উর্বরতার মূল চালিকাশক্তি। বছরে এক থেকে এক দশমিক দুই শতাংশ চাষযোগ্য জমির উর্বরতা নষ্ট করছে ইটভাটাগুলো। সর্বত্রই কৃষিজমির মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। অথচ ইটভাটার কবল থেকে জমি রক্ষার জন্য সরকার মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরিকে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু সরকারি পর্য়ায়েই মাটি কেটে পোড়ানো ইটের চাহিদা কমে নি। চাষের জমি রক্ষার জন্য ২০১৯ সালে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে সারা দেশে শতভাগ সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে, ভবনের দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর তৈরি, হেরিং বোন বন্ড রাস্তা ও গ্রাম্য সড়ক তৈরিতে ইটের বিকল্প কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করতে হবে। সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, সনাতন পদ্ধতিতে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি করায় একদিকে কৃষিজমি ধংস হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশের সর্বনাশ হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে,ইট ভাটার পরিবেশ দূষণ থামছে না। পরিবেশ সম্মত পদ্ধতিতে ইট পেড়ানোর সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করছে ইটভাটার মালিকেরা।
কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা। একটি জরিপের তথ্য হচ্ছে, দেশের ইটভাটাগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশেরই বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই। আর বৈধ ও অবৈধ ইটভাটার ৯০ শতাংশেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর অবৈধ ইটভাটার প্রায় ৯০ শতাংশ তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। ৬০ শতাংশ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাগোয়া। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ অনুযায়ি সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন, সিটি করপোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি, আবাসিক এলাকা, ফলের বাগান ও উপজেলা সদরের সীমানার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। আইন অনুযায়ী তিন ফসলি জমি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও ইটভাটা করা যাবে না। ইটভাটার জন্য ফসলি জমির মাটি কাটা যাবে না। ইটভাটায় কোনভাবেই কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো যাবে না। এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি হওয়ার বিধান রয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশের সর্বত্র পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে ইটভাটা ব্যবসা। এগুলোর বেশিরভাগই কোন ধরণের আইন কানুনের ধার ধারে না। তারা কাঠ পুড়িয়ে ফসলি জমির মাটি দিয়ে তৈরি করছে ইট। আর সেই ইট ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি নির্মাণকাজেও। এই অবস্থায় প্রথমে সরকারি কাজে ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া, ইটভাটাগুলো যাতে ধীরে ধীরে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি বন্ধ করে কংক্রিট ব্লক তৈরির দিকে ঝুঁকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।