নোট-গাইডনির্ভর শিক্ষা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:৫১:৩১ অপরাহ্ন
আপনি যদি গরিব হয়ে জন্ম নেন তাহলে এটা আপনার দোষ নয়, কিন্তু যদি গরিব থেকেই মারা যান তবে সেটা আপনার দোষ। -বিল গেটস
শত চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের ‘নোট-গাইডের কবল’থেকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। সরকার ‘নোট-গাইড’ বাতিল করলেও ভিন্ন নামে বাজারে এসেছে এগুলো। আর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় নোট-গাইডের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে চলেছে। জানা গেছে, করোনা মহামারি পরবর্তী শিখন কার্যক্রমে ৭৯ শতাংশ প্রাথমিক ও ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী বাণিজ্যিক গাইড বই অনুসরণ করেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
মূলত নোট-গাইডনির্ভর লেখাপড়া অতীতেও ছিলো। তবে এখনকার মতো এতো ঢালাওভাবে ছিলো না। কিছু কিছু শিক্ষার্থী নোট ব্যবহার করতো; তবে সব বিষয়ে নয়। বর্তমানে সব শিক্ষার্থী সব বিষয়েই নোট-গাইডের ওপর নির্ভরশীল। সেই সঙ্গে রয়েছে কোচিং। ইতোপূর্বে সরকার নোট-গাইড ও কোচিং বন্ধে আইন করে। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। আইনে নিষিদ্ধ করার পর নোট বই ও গাইড বই খোলস পাল্টে সহায়ক বই হিসেবে ‘অনুশীলন মূলক’ বই নামে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ নোট-গাইড এখন বাজারে সহায়ক বই বা অনুশীলন মূলক বই হিসেবে পরিচিত। উল্লিখিত জরিপে আরও বলা হয়, প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ে নির্ভরতার চিত্র শহর ও গ্রামাঞ্চলসহ সব এলাকায় একইরকম। মাধ্যমিক স্তরের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘প্রাইভেট টিউটর’ বা ‘কোচিং’-এর ওপর নির্ভরশীল। সবচেয়ে বড় কথা,অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকও মনে করেন, নোট-গাইড
ছাড়া লেখাপড়া সম্ভব নয়। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিশেষ করে সৃজনশীল পদ্ধতিতে যে উদ্ধৃতি দেওয়া থাকে সেখানে গল্পের সঙ্গে পরবর্তী প্রশ্নগুলোর মিল থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে নোট গাইডের সাহায্য নিতে হয়। তাছাড়া, নোট গাইডের ব্যাপারে শিক্ষা আইনেও বলা হয়েছে, কোন প্রকাশক কেবল সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রি প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু কোন ধরনের নোটবই, গাইড বই বা নকল মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ ও বাজারজাত করা যাবে না। এই সুযোগেই ভিন্ন নামে বাজারে এসেছে নোট-গাইড। প্রতিবছরই অভিযোগ ওঠে যে, এসব নোট ও গাইড ক্লাসে পড়ানো না হলেও শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করা হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে সংশ্লিষ্টদের উচিত মূল বইকে সহজ সাবলীল করা। যেন শিশুরা সেখান থেকে প্রশ্ন এবং উত্তর খুঁজে পায়।
সব কথার শেষ কথা, শিক্ষার্থীদের প্রতি নোট ও গাইড বই ব্যবহার না করার নির্দেশ থাকলেও এটি বন্ধ হচ্ছে না। বরং শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক চাহিদা থাকায় নোট ও গাইড-নির্ভরতা কমানো যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এখনি মূল বইয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে নোট গাইডে নিরুৎসাহিত করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীরা মূল ধারার জ্ঞান অর্জন থেকে পিছিয়ে পড়বে।