রুশ মসজিদগুলো
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:৫৬:২২ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
সোভিয়েত রাশিয়ায় ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্ব থেকে অনেকগুলো মসজিদ ছিলো। মসজিদগুলো বিপ্লবের পর গুড়িয়ে দেওয়া হয়নি, ভেঙ্গে ফেলা হয়নি। তবে বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ ছিলো। কিছু মসজিদকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হয়। কমিউনিস্ট শাসনের অবসানের পর মসজিদগুলো পূর্ব অবস্থায় ফিরে যায়। নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে আছে জুম্মাহ মসজিদ। সম্ভবত এটি রাশিয়ার প্রাচীনতম মসজিদ। জুম্মাহ মসজিদ ৭৫০ সালের দিকে নির্মিত হয়েছে। মসজিদটি রাশিয়ার ডার্বেন্টে অবস্থিত। জাতিসংঘের ইউনেস্কো মসজিদটিকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ হিসেবে গণ্য করেছে। শিয়া-সুন্নি উভয় গোত্রের মুসল্লিরা এ মসজিদে নামাজ পড়তে পারে। মসজিদে নামাজের জায়গা ছাড়াও আছে একটি লাইব্রেরি, একটি প্রকাশনা ঘর এবং ইমামের জন্য আলাদা অফিস। রাশিয়ায় ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিলো ১৩ শতক ধরে অবস্থান করা জুম্মাহ মসজিদের মাধ্যমে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালে ১৯৩০ সালের দিকে মসজিদটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৩৮-৪৩ সাল পর্যন্ত মসজিদটি কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৪৩ সালের শেষ দিকে মুসল্লিদের নামাজের জন্য মসজিদটি আবার খুলে দেওয়া হয়। সে সময় নর্থ ককেসাসের সবচেয়ে বড় মসজিদরূপে পরিচিতি পায় মসজিদটি।
রাশিয়ার অন্য মসজিদগুলো হলো কুল শরিফ মসজিদ (১৬ শতকের শুরুতে নির্মিত). নিঝনেকামস্কের সেন্ট্রাল মসজিদ (১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত), বুলগার মসজিদ (১৯৯৩ সালে উন্মুক্ত), মস্কোর জামে মসজিদ (১৯০৪ সালে নির্মিত), লালা তুলপান মসজিদ। এছাড়া রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে আরো অনেক মসজিদ রয়েছে।
সৌন্দর্যের দিক দিয়ে লালা তুলপান রাশিয়ার অন্যতম মসজিদ। রাশিয়ার ইসলামিক সংস্কৃতি এই মসজিদ বেশ পরিচিত। মসজিদটি রাশিয়ার উফায় অবস্থিত। এখানে একসঙ্গে ১০০০ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। মহিলা ও পুরুষের নামাজের আলাদা জায়গা আছে।
রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা সেন্ট্রাল এশিয়ার উজবেকিস্তান, তাজাকিস্তান, কিরগিজ প্রভৃতি স্থানে সুন্দর সুন্দর মসজিদ আছে। উজবেকিস্তানের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম বাবাখানম একবার কাবাশরিফের গিলাফ নিয়ে সিলেট এসেছিলেন। হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে গিলাফ দান করেছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোর সুপরিচিত জামে মসজিদটি ১৯০৪ সালে নির্মিত হয়। নির্মাণের পর একাধিকবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়। রাশিয়ার তাতার গোত্রের মুসল্লিরা মসজিদটি অধিক ব্যবহার করেন। সোভিয়েত বিপ্লবের পর ২০১১ সালে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে মসজিদটি পুননির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। পুননির্মাণের পর বেশ জাকজমকভাবে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, তুর্কির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে একসঙ্গে এই মসজিদে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। মস্কো জামে মসজিদটি ছয়তলা বিশিষ্ট। এখানে একটি বড় লাইব্রেরি আছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক দেশ রূপান্তর, ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১৭ মাঘ, ১৪২৬