মুসলিম সাহিত্য সংসদের ৮৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:৩০:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ৮৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শনিবার। ১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের যাত্রা শুরু হয়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ অঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে সাহিত্য সংসদ অনন্য অবদান রেখে চলেছে।
সাহিত্য সংসদের প্রাণপুরুষ ও আজীবন সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হক ১৯৩২ সালে ‘আল-ইসলাহ’ নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই আল ইসলাহকে কেন্দ্র করেই ১৯৩৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দরগাহ-ই-হযরত শাহজালাল (রহ:)-এর মোতাওয়াল্লি¬, কথা সাহিত্যিক সরেকওম আবু জাফর আব্দুল্ল¬াহর বাড়ির বৈঠকখানায় একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় মরমী কবি হাসন রাজার পুত্র দেওয়ান একলিমুর রাজাকে সভাপতি এবং সরেকওম আবু জাফর আব্দুল্লাহকে সম্পাদক এবং আল ইসলাহ সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হকসহ দশজনকে সদস্য করে সর্বমোট ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশনে নূরুল হক সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। আমৃত্যু তিনি এই দায়িত্ব পালন করে যান। ১৯৮৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মুহম্মদ নূরুল হক ইন্তেকাল করার পর সিলেটের বিশিষ্ট গুণীজন পর্যায়ক্রমে সংসদের
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সাহিত্য সংসদের মুখপত্র আল-ইসলাহ এখনো প্রায় নিয়মিত বের হচ্ছে।
ভাষা আন্দোলনে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোর চেয়ে সিলেট জেলা ছিলো অনেক এগিয়ে। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলো সাহিত্য সংসদ। সেই সাতচল্লিশ সনেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে আল ইসলাহতে সম্পাদকীয় লেখা হয়। সাতচল্লিশেই সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে ৯ ও ৩০ নভেম্বর, ২৮ ডিসেম্বর বাংলা ভাষার পক্ষে তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ৩০ নভেম্বরের সভাটি উর্দুর সমর্থকরা প- করে দেয়। এইভাবে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সৈনিকরা পরে রাজপথে নেমে আসেন এবং তাদের সিপাহশালার ছিলেন সাহিত্য সংসদ সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশে নজরুল চর্চায় কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কবি নজরুলের বয়স যখন ৫৫ বছর দেড় মাস, তখন সাহিত্য সংসদ সিলেটে ‘নজরুল ইসলাম দিবস’ পালন করে। ১৯৪৩ সালে সাহিত্য সংসদ কবি নজরুলের চিকিৎসার সাহায্যার্থে ‘নজরুল সাহায্য ভান্ডার’ গঠন করে। মুসলিম সাহিত্য সংসদ এদেশে প্রথম নজরুল সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করে।
সংসদের উদ্যোগে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধায় অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্য আসর। সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের লক্ষে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ‘কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করা হচ্ছে। জ্ঞান চর্চায়-সমাজসেবায় অবদানের জন্যে প্রতি বছর একজন অথবা দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাহিত্য সংসদের ‘সম্মানসূচক সদস্য পদ’ প্রদান করা হয়।
নতুন প্রজন্মকে এদেশের প্রকৃতি, লেখক-কবিদের বেড়ে ওঠার স্থল এবং ঐতিহাসিক স্থানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে ‘শেকড়ের সন্ধানে অভিযাত্রা’ নামে একটি কর্মসূচী পরিচালিত হয়।
মাত্র ১৯টি বই নিয়ে সাহিত্য সংসদের পাঠাগারের যাত্রা শুরু হয়েছিলো, এখন বইয়ের সংখ্যা অর্ধ লাখেরও উপরে। এখন প্রতিদিন শত শত পাঠক সাহিত্য সংসদ পাঠাগারে বসে বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়তে পারেন। বই বাড়িতে নিয়ে পড়ারও ব্যবস্থা আছে। সাহিত্য সংসদ প্রতি বছর বই মেলার আয়োজন করে। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে (২৪-২৬ মার্চ) প্রথম কেমুসাস বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিকে অনিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এখন নিয়মিতভাবে প্রতি বছর বইমেলা হচ্ছে। বইমেলায় সিলেট ও ঢাকার প্রকাশকরা অংশ নেন।
হযরত শাহজালাল (রহ:) মাজারের প্রধান ফটকের গা ঘেঁষেই সাহিত্য সংসদের সুরম্য নিজস্ব ভবন। ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরের পরিমাণ সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুট। নতুন ভবনটিতে রয়েছে বিশাল অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি, জাদুঘর, সাহিত্য আসর কক্ষ ইত্যাদি।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে যেমন পুরনো বই রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি শিলালিপি। এরমধ্যে সবচে’ উল্লেখযোগ্য মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতের লেখা কোরআন শরীফ। সংসদ ভবনে’র পঞ্চম তলায় সাহিত্য সংসদের সাবেক সভাপতি ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদের নামে চার হাজারেরও বেশি সংগ্রহ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি জাদুঘর রয়েছে।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সংসদের কর্মসূচি : দেশের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট এর ৮৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভা আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় সাহিত্য আসর কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কেমুসাসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় সংসদের সকল সম্মানিত পৃষ্ঠপোষক ও জীবন সদস্যদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মবনু অনুরোধ জানিয়েছেন।