জাতীয় শিক্ষা দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:৫৯:১৮ অপরাহ্ন
বুদ্ধিমান ও কৃতি ব্যক্তি ছাড়া কারও সঙ্গ আশা করো না। -হজরত আলী রা.
আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিক্ষা দিবস। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষে প্রতিবছর আজকের এই দিনে পালিত হয় দিবসটি। কোন জাতির সার্বিক উন্নতির প্রধান বাহক শিক্ষা। আর তাই শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে না আমাদের দেশে। দীর্ঘদিন পরে হলেও একটা শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। কিন্তু তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অপরদিকে একটি মহল শিক্ষাকে রীতিমতো ‘বাণিজ্যে’ পরিণত করে ফেলেছে। বিভিন্ন স্তরে শিক্ষাপদ্ধতিতেও নানা ত্রুটি রয়েছে বলে শিক্ষাবিদেরা মন্তব্য করছেন। তাছাড়া, সার্বিক শিক্ষিত বা সাক্ষর মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। এই প্রেক্ষাপটেই আজ দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিক্ষা দিবস।
বর্তমান পথচলা কিংবা ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান পাথেয় হচ্ছে শিক্ষা। অগ্রসরমান চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকালে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলোর মধ্যে শিক্ষাকে অবশ্যই তালিকার শীর্ষে স্থান দিতে হবে। আর শিক্ষা গ্রহণের সময় হচ্ছে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি জাতির গৌরব। সে নিজের পায়ে যেমন দাঁড়াতে পারে, তেমনি জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নও দেখে। একটি শিক্ষিত জাতি বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। তবে সেটা হতে হবে সুশিক্ষা। মানে সুশিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি বা সমাজ বা জাতিই একটা নতুন যুগের জন্ম দিতে পারে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সমৃদ্ধির পেছনে যতোগুলো কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুশিক্ষা। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা কথা বলে আসছেন বুদ্ধিজীবীরা। তারা বলছেন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন স্তরের সিলেবাসকে সাজাতে হবে; গড়ে তুলতে হবে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। আর সেই লক্ষে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। এই ভূ-খন্ডে একটা শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৫৯ সালে। কিন্তু সেটা ছিলো বিতর্কিত। ফলে ছাত্র আন্দোলনের মুখে তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ১৯৬৪ সালে আবার শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেটাও ছিলো বিতর্কিত এবং আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আরও বার কয়েক শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সফলতা আসে নি। অবশেষে বর্তমান সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। যা দেশে-বিদেশে বেশ প্রশংসিতও হয়েছে। যদিও এই শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।
আজকের জাতীয় শিক্ষা দিবসে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে সব ধরণের প্রতিবন্ধকতা দূর হোক। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হোক। সেই সঙ্গে এগুলোতে যাতে লেখা পড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে সেটা নিশ্চিত করা হোক। তাছাড়া, শিক্ষকের শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হোক অচিরেই। সবচেয়ে বড় কথা, সময়োপযোগি, বিজ্ঞানমনষ্ক ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা হলে একটি নীতিবান, আদর্শ, সুশিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে। শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি। বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের শিক্ষাটাও হওয়া উচিত বিশ্বমানের।