‘ভাঙা ব্রিজ’র দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৩৩:১৪ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে: কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের দেউলা দরম খালের ওপর ব্রিজটি দুই দশক হয় কাত হয়ে আছে। এটি সংস্কার কিংবা ভেঙে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। জরাজীর্ণ এই ব্রিজ দিয়েই লম্বাকান্দি, ঢোলাখাল ও বাঘারপাড়সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের একপাশ দেবে কাত হয়ে আছে। রেলিং ভেঙে গেছে। হেলে পড়েছে গার্ড ওয়াল। ব্রিজের এপ্রোচ সড়ক বিধ্বস্ত। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক থেকে মানুষ নেমে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিএনজি অটোরিকশাও।
এদিকে, দেউলা দরম খালের ওপর এই ব্রিজ কত সালে নির্মিত হয়েছে বা কারা করেছে, এর নির্মাণ ব্যয় কত ছিল, এ তথ্য জানাতে পারেনি কেউ। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় বলছে, ব্রিজটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। এলজিইডি বলছে, ব্রিজটি তারা করেনি।
তবে, এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলেন ঢোলাখাল গ্রামের এখলাছুর রহমান মেম্বার। বললেন, ‘আশির দশকের শেষের দিকে এবং ’৮৮ বন্যার আগে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই ছোট ব্রিজ নির্মিত হয়।’ তাঁর ভাষ্য, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে আর মেরামত করা হয়নি।’
ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের দাবি, এলজিইডি কর্তৃপক্ষই দেউলা দরম ব্রিজ নির্মাণ করেছে। লম্বাকান্দি, ঢোলাখাল, বাঘারপাড়, রাজারখালসহ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে ব্রিজটি এক সূতোয় বেঁধেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জব্বার খাঁ ও মহব্বত আলী বলেন, এই ভাঙা ব্রিজ দিয়েই স্থানীয় কৃষকেরা ধানসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য বাজারে নিয়ে যান। কত বছর হলো ব্রিজটি এভাবেই পড়ে আছে। কেউ এটি ঠিক করার চিন্তা করে না।
ইজিবাইকচালক শরিয়ত উল্লাহ ও তাজির মিয়া জানান, ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত শুক্রবারও ব্রিজের এপ্রোচে দু’টি ইজিবাইক উল্টে পড়ে যায়। এতে গাড়ির যাত্রীরা আহত হন। গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সিএনজি অটোরিকশা চালক এখলাছ মিয়া জানান, ‘ভাঙা ব্রিজ পার হতে গিয়ে ভয়ে থাকি। কখন জানি ভেঙে পড়ে। তবুও এই ব্রিজই আমাদের ভরসা।’
স্থানীয় কাঁঠালবাড়ি চৌমুহনীবাজার আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা শামসুজ্জামান বলেন, তাঁদের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী আসে দেউলা ব্রিজের অপর পাশ থেকে। প্রতিদিন কয়েক শ’ ছেলেমেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্রিজ পার হয়ে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কান্তি দাস বলেন, ‘দেউলা দরম ব্রিজ আমাদের দপ্তর করেনি। আমাদের ব্রিজের ডিজাইন অন্য রকম।’
উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ খান রাবি বলেন, ‘ব্রিজের দুই দিকের সড়ক আমাদের হলেও ব্রিজটি আমাদের দপ্তর করেনি। এরপরও জনভোগান্তির কথা ভেবে একটি প্রস্তাব সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি।’