সর্পদংশন সচেতনতা দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১:৪৪:৪৫ অপরাহ্ন
যে নিজেকে দমন করতে পারে না, সে নিজের জন্যেও বিপদজনক এবং অন্য সবার জন্যেও। -থেলিস
আজ আন্তর্জাতিক সর্পদংশন সচেতনতা দিবস। স্বাভাবিকভাবেই সর্পদংশন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে দিবসটি পালিত হয়। দিবসটি যখন দেশে পালিত হচ্ছে, তখন বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময়ই সর্পদংশনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাপের কামড় একটি মারাত্মক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ গুরুত্ব না দেওয়ায় এ নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। তাদের হিসেবে সারা বিশ্বে প্রতি চার মিনিটে একজন সাপের কামড়ে মারা যাচ্ছেন।
সর্পদংশনের ঘটনা ঘটছে নানা স্থানে। এর মধ্যে সবাই যে মারা যাচ্ছে তা নয়। হাজার হাজার মানুষ সাপের কামড় খাওয়ার পরেও হয়তো বেঁচে আছেন। কিন্তু তাদের শরীর বিকৃত হয়ে গেছে কিংবা শরীরের কোন একটি অঙ্গ কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। জানা যায়, সাধারণত দরিদ্র মানুষেরা সর্পদংশনের শিকার হন সবচেয়ে বেশি। আর এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি প্রকট আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলোর দরিদ্র এলাকাগুলোতে। কৃষকরা যখন প্রতিদিন তাদের ফসল ফলাতে মাঠে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই তারা সর্পদংশনের শিকার হচ্ছেন। শিশুদের সাপে কাটার হারও খুব বেশি। দেশে প্রতিবছর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন ৭ লাখ মানুষ। এতে প্রতিদিন অন্তত ১৬-২০ জন মানুষ মারা যাচ্ছ। বর্ষাকালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাপে কাটা রোগি হাসপাতালে আনার পথে মৃত্যু ঘটে।
গ্রামাঞ্চলে অ্যান্টিভেনম না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে মানুষজন বাধ্য হয়ে ওঝার শরণাপন্ন হচ্ছে। দেশে মাতৃমৃত্যু অপেক্ষা সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাপের বেশিরভাগ প্রজাতি নির্বিষ এবং সাধারণত তারা শিকার করে শিকারকে চারপাশ দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে। তুলনামূলক অল্প সংখ্যক সাপই বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শিকারকে হত্যা করে। পৃথিবীতে সাপের ৩,০০০ প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের দংশন মানুষের জন্য বিপজ্জনক। অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানেই বিষধর সাপের দেখা মিলে। সাপ সাধারণত শিকারের জন্যই দংশন করে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে নিজেকে হুমকির সম্মুখীন মনে করলে ক্ষতিসাধন এড়াতেও তারা দংশন করে। যেহেতু একই সাপ দেখতে বিভিন্ন রকম হতে পারে, তাই নির্দিষ্ট কোনো প্রজাতি নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। এজন্য সঠিক চিকিৎসা পেতে অবশ্যই পেশাদার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সাপ নিয়ে মানুষের ভীতি, আতঙ্ক ও কৌতূহলের শেষ নেই। তাই তো কতো ধরনের নাগ-নাগিনি আমাদের গল্প, সাহিত্য ও সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি সর্পদংশন প্রতিররোধে সচেতনতাও জরুরি। বিশেষ করে, বাড়ির আশপাশের জঙ্গল পরিষ্কার রাখতে হবে, ঘুমানোর সময় অবশ্যই ভালো করে মশারি টাঙাতে হবে, রাতে বা অন্ধকারে হাঁটার সময় অবশ্যই টর্চ ব্যবহার করতে হবে, সাপে কাটলে রোগির ক্ষতস্থানটি সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে এবং সাপে কাটলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।