উপাচার্যের আশার বাণী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:০১:৪৩ অপরাহ্ন
মো. রফিকুল ইসলাম
আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। দলীয় রাজনীতি, মিছিল-মিটিং, সংঘাত-সংঘর্ষ, খুন-খারাবী, র্যাগিং ইত্যাদির কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমতাবস্থায় গত ৩০ আগস্ট ২০২৩ইং তারিখে শাবিপ্রবির নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জাতিকে কিছু আশার বাণী শুনালেন। আমার বিশ্বাস, তাঁর কথাগুলো যদি শাবিসহ দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে সেখানে হানাহানি খুন-খারাবী বন্ধ হয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করবে এবং শিক্ষার্থীরা নিরাপদে পড়াশোনা ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।
এবার আমি শাবিপ্রবির উপাচার্য মহোদয়ের মূল্যবান বক্তব্য নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করছি। উপাচার্য স্যার তার বক্তব্যে বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গিবাদ, র্যাগিং, ধূমপানমুক্ত এবং শিক্ষার্থীবান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি আরো বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান অনেক ভাল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যেতে হবে। নবীনদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, তোমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। কোন সিনিয়র তোমাদের হলে কিংবা মেসে ডাকলে তোমরা সেখানে যাবে না। যারা যাবে, তারাও সমান অপরাধী। তবুও কেউ এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে, সাথে সাথে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে। তবে কোন ধরনের আত্মঘাতী বা হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, কেউ র্যাগিং করলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তিনি এ কথাও বলেন যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীবান্ধব। তারা সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ভাল করে পড়াশোনা করে এবং সঠিক সময়ে পাশ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার পরামর্শ দেন।
উপাচার্য মহোদয়ের বক্তব্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সময়োপযোগী এবং দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কার্যকর। বর্তমানে আমাদের দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। এর জন্যে দায়ী, দলীয় রাজনীতি, র্যাগিং, মাদক, ইত্যাদি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে দলীয় প্রোগ্রাম অর্থাৎ মিছিল-মিটিং ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মিছিল-মিটিং করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ বাঁধে। এতে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হয় এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারা সাধারণ ছাত্রদের মিছিল-মিটিং এ যেতে বাধ্য করে। সাধারণ ছাত্ররা মিছিল-মিটিং এ যেতে না চাইলে তাদের উপর নানা প্রকার নির্যাতন চালানো হয়। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টর্চারিং চালু করেছে। এসব টর্চারিং সেলে ছাত্রনেতারা সাধারণ ছাত্রদেরকে ধরে নিয়ে নানা প্রকার নির্যাতন চালায়। এ ধরনের নির্যাতনে অনেক ছাত্র মারাও যায়। হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অনেক সময় এসব দেখেও না দেখার ভান করেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং এর নামেও নবাগত শিক্ষার্থীদের নানা প্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ কারণে বহু নবীন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যায়। কাজেই ছাত্ররাজনীতি এবং র্যাগিং এ দুটোই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য হুমকীস্বরূপ। তাই এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। মাদক সেবন করে বহু শিক্ষার্থী নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। তাই মাদক থেকে তাদের দূরে থাকা প্রয়োজন।
উপরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তা লেখাপড়ার জন্য মোটেই অনুকূল নয়। এই অবস্থায় শাবিপ্রবির মাননীয় উপাচার্য নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কেবল শাবিপ্রবির জন্যই নয়, বরং দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের উচিত নিজেদের স্বার্থে উপাচার্যের উপদেশগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।
দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং উপাচার্যগণের উচিত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা- ইহাই সকলের প্রত্যাশা।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।