গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২৬:৩৬ অপরাহ্ন
অ্যাডভোকেট আনসার খান
রাজনীতি একটি নিরবয়ব গতিশীল ধারার মতো, পক্ষান্তরে রাষ্ট্র হলো একটি স্থিতদি সাবয়ব সত্তা, ক্ষমতা ও আইনশৃঙ্খলা হলো যার চরিত্র নির্দেশক বৈশিষ্ট্য। কর্তব্য ও অধিকারের সমষ্টি এবং জটিল নিয়ম-প্রণালী ও প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়েই রাষ্ট্রের সৃষ্টি। রাজনীতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি পদ্ধতির অপরিহার্যতার প্রেক্ষিতেই একটি পদ্ধতি হিসেবে খ্রীষ্ট পূর্ব ৫ম শতকে “গণতন্ত্রের” উদ্ভব হয়েছিলো।
গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যা জনগণের স্বপক্ষে জনগণেরই চুড়ান্ত নিয়ন্ত্রণাধীনে এবং জনগণেরই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে এবং এটি এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে জনগণের সামাজিক সম্পর্ক ও দলীয় বৈচিত্র্যের সমন্বয় সাধন করে রাষ্ট্র জনগণের সাম্য, স্বাধীনতা, জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে থাকে।
গণতন্ত্র একটি অতি প্রাচীন রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত পদ্ধতি হলেও আধুনিক যুগেও এর গ্রহণযোগ্যতা এবং গতিময়তা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র এখন মানব সভ্যতার অগ্রগতি, উন্নয়ন ও বিকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতির অপরিহার্য এবং অনবদ্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে অভিহিত হয়েছে সর্বত্র।
কোনো সমাজের মোট সম্পদ বা দৈন্যতা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় নয়। গণতন্ত্রের মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ন্যায্য বন্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রাচুর্যের চেয়ে সাম্য এবং সম্পদ সৃষ্টির চেয়ে সামাজিক ন্যায় বিচারই গণতন্ত্রের মূল বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থানের নিশ্চয়তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিধেয় বস্ত্রের নিশ্চয়তা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার ও চাহিদাগুলোর নিশ্চিত ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার দিয়ে শাসনে, সরকারে, শাসক এবং প্রতিনিধি নির্বাচনে নাগরিকদের পছন্দসই অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে গণতন্ত্র মানব উন্নয়নে নিরাপত্তাবোধের সৃষ্টি করেছে।
গণতান্ত্রিক শাসনে সম্পদের প্রাচুর্যতা, মানুষের উন্নত জীবনমানের নিশ্চয়তা, বাক ও ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা, সাম্য, ন্যায় বিচার, ব্যক্তির মর্যাদা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের মতপ্রকাশের বাধাবিঘœহীন অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করায় গণতন্ত্রের প্রতি দেশে-দেশে মানুষের আগ্রহের কারণে গণতন্ত্র উদ্ভবের পরে প্রায় দুই-আড়াই হাজার বছরধরে সগৌরবে গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রয়েছে, যদিও নানাভাবে গণতন্ত্রের অবিরাম বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশসহ সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক আদর্শভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছিলো। কিন্তু নানা অর্থনৈতিক ও শাসনব্যবস্থার ত্রুটি, মানুষের জীবনের বিকাশের জন্য অপরিহার্য মৌলিক মানবাধিকারের অনুপস্থিতি, জনগণের অংশগ্রহণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাবসহ অপরাপর গণতান্ত্রিক অধিকারহীনতার কারণে গণতান্ত্রিক শাসনের আকাক্সক্ষার উদ্ভব হয়েছিলো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর জনগণের মধ্যে।
ফলে জনগণ রাষ্ট্রের নিকট গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ পূরণের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্র জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের চাহিদা মেটাতে সমর্থ না হওয়াতে ওই দেশগুলোতে গণতন্ত্রের জন্য সমাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণবিপ্লবের প্রেক্ষিতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনে শাসিত রাষ্ট্রগুলোর পতন হয়েছিলো গত শতকের নব্বইয়ের দশকে।
শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত উন্নয়ন যে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়, এগুলোর পাশাপাশি মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের চাহিদা মেটানো যে কতটা জরুরি তার প্রমাণ বহন করছে পতিত ওই সমাজতান্ত্রিক আদর্শের রাষ্ট্রগুলো। ওইসব সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে পুঁজিবাদের একটি অর্থনৈতিক বিকল্প হিসেবে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলো।
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনে যে সক্ষম তার প্রমাণও রেখেছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৯২৮-১৯৫৫ সালের মধ্যবর্তী সময়জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে গড় জাতীয় উৎপাদন বার্ষিক ৪.৪% থেকে ৬.৬% হারে বৃদ্ধি পেয়েছিলো। এই হার যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত দু’দশকের গড় জাতীয় উৎপাদনের চেয়ে ৫০% বেশি দ্রুতগতি সম্পন্ন। সমগ্র দেশে ব্যাপক শিল্পায়ন, প্রতিরক্ষা শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষতা অর্জন, পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন, দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো। মাত্র এক প্রজন্মেরও কম সময়ের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি শিল্পদানবে পরিণত হয়েছিলো। চতুর্দিকে সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার। কিন্তু এতো সব উন্নয়ন, অগ্রগতি সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমাজতন্ত্রের পতন ঠেকানো যায়নি।
দ্রুত শিল্পায়নের ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির উন্নতি সাধিত হলেও সমাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় গণমানুষের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ না থাকা, সরকার নির্বাচন ও সরকার পরিবর্তনে জনগণের কার্যকর কোনো ক্ষমতা না থাকা, জনগণের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার অস্বীকার করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মৌলিক মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো ছিলো অনুপস্থিত। অর্থাৎ এই শাসনে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকার করা হয়েছিলো। পরিবর্তে অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো জনগণের উপর।
সমাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনের অধীনে থাকা মানুষেরা এইধরনের গণতন্ত্রহীনতা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। এইধরনের শাসনের বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহ করেছিলো। কেবল অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত অগ্রগতি ও উন্নতি যে গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে না, এটি তারই প্রমাণ। গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষার উদ্ভব রাজনীতি ও আদর্শের জগতে। তাই গণমানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দাবিয়ে রেখে কোনো শাসনই যে টিকে থাকতে পারে না, তা সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পতনের মধ্যদিয়েই উদাহরণ হয়ে আছে।
গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাই বলেন, সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো, কর্তৃত্ববাদী, একদলীয় এবং নিরঙ্কুশ একনায়কতান্ত্রিক শাসন, জনগণের উপর তীব্র দমন-পীড়ন, কিছু লোকের ব্যক্তিগত আধিপত্য স্থাপন, লৌহকঠিন শৃঙ্খলা, ভিন্নমতের প্রতি তীব্র দমননীতি রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে ধ্বংস করে দিয়েছিলো-যার সঙ্গে যোগ করা যায় গণতন্ত্রহীনতা, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার বিলোপ এবং নাগরিক জীবনের উপর রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, যেখানে জনগণ রাষ্ট্রের দাসে পরিণত হয়েছিলেন। রাষ্ট্র যে একটি নিপীড়ক যন্ত্র এবং মানুষের ওপর রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন ও নির্লজ্জতার ধারাবাহিক ইতিহাসের পথে সত্যের কন্ঠ রুদ্ধ করার ট্র্যাডিশনাল বর্বরতার বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো সোভিয়েত রাষ্ট্রযন্ত্র।
আমলাতন্ত্রের হাতে দেশ আর মানুষ জিম্মি হওয়ার পর শাসকদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। রাষ্ট্রের উপর জনগণের মালিকানার অস্বীকার এবং এর পরিবর্তে রাষ্ট্রে মানুষের একমাত্র পরিচয় ছিলো সে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রকাঠামোর একটি অংশমাত্র। এইভাবে মানুষের জীবনের সবকিছু রাষ্ট্রীয় বা সরকারি কাঠামোর অংশে পরিণত হওয়ার কারণে শাসকশ্রেণী আর রাষ্ট্রের মধ্যে ভেদরেখা বলে কিছু থাকেনি।
শাসকদের একচ্ছত্র আধিপত্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষ যখন ক্রমেই ফুঁসে ওঠতে শুরু করেছিলো এবং শাসকগোষ্ঠী যখন উপলব্ধি করতে পারে যে, অবিলম্বে শাসনে, রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে সংস্কার সাধন করা না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঠেকানো অসম্ভব হবে, তখন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ তার নতুন তত্ত্ব হাজির করেছিলেন।
১৯৮৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী শাসকদল, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তার বিখ্যাত “গ্লাসনস্ত” রুশ শব্দ, যার অর্থ হলো, মুক্তচিন্তা ও স্বচ্ছতা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক তথা সমস্ত ক্ষেত্রেই স্বাধীন ও মুক্ত আলোচনার সূযোগ অবারিত করা। অর্থ্যাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর এতদিন যেসব বাধা ছিলো তার অপসারণ করা এবং “পেরেস্ত্রোইকা” নীতি ঘোষণা করে জনগণকে আশ্বস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো কারণে মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঠেকানো যায়নি, পতন ঠেকানো যায়নি পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসনের। ভেঙে পড়েছিলো দুনিয়ার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের রাষ্ট্রব্যবস্থা।
কর্তৃত্ববাদী শাসনে মানুষের গণতান্ত্রিক ও মুক্ত চিন্তার অধিকার নানাভাবে বারিত থাকে, যা গণতন্ত্রের বিপরীত। ব্যক্তির সামাজিক অবস্থা ও এর মধ্যে তার আত্মসচেতন ভাবনা-চিন্তার ফলেই গণতন্ত্রের উদ্ভব। গণতন্ত্রের মধ্যে যে প্রধান মনস্তাত্ত্বিক তাগিদ রয়েছে, তাহলো সর্বজনীন সমানাধিকারের স্বীকৃতির আকাঙ্খা- যা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত। সমতার ভিত্তিতে নাগরিকের ন্যুনতম অধিকারসমূহের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা বিধানের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। ফরাসী এবং আমেরিকান বিপ্লবের মধ্যদিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে অগ্রসর দেশগুলোতে সর্বজনীন স্বীকৃতির নীতি কার্যকর হয়েছে এবং এখনো তা যুক্তিসঙ্গতভাবে টিকে আছে।
গণতন্ত্রকামী স্বাধীন মানুষেররা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ প্রত্যাশা করে যেখানে মানুষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা থাকবে, যেখানে প্রশাসনে ও রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে এবং সর্বোপরি যেখানে তাদের সার্বিক মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে, যা সমাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসনে নিশ্চিত করা যায়নি।
মানবসভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সমাজ যতই সম্পদশালী ও নিরাপদ হতে থাকে, ততই সমাজের মানুষ সামাজিক মর্যাদা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে এবং ক্রমান্বয়ে তা অর্জনের জন্য চেষ্টা করে।
স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন আবশ্যকীয় শর্ত নয়, তেমনি গণতন্ত্রের জন্য তা যথেষ্টও নয়। অর্থাৎ এটি বলা যায় যে, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী সাধারণ কোনো মানদ- নেই। মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন সব ক্ষেত্র তৈরি করে যা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নে জনগণকে উৎসাহিত করে থাকে।
গণতন্ত্র মানুষকে অবাধ অনুসন্ধান, মুক্তগণমাধ্যমের অধিকার ও শাসকদের কাজের ভালো-মন্দের সমালোচনা করার অধিকার উন্মুক্ত করে দেয়, যা নিজের কাজের ভূল সংশোধনে সহায়ক হয়। গণতন্ত্রের আদর্শ ও লক্ষগুলো বলিষ্ট এবং গতিশীল, যা জনগণের নিকট অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে থাকে। কিন্তু একদলীয় সমাজতান্ত্রিক আদর্শের কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্র : গণতান্ত্রিক সভ্যতা, সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন, গ্লাসনস্ত, গণতন্ত্র, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা।