ভৈরব থেকে সিলেটে বিএনপির ১৬০ কিলোমিটার রোডমার্চ
মানুষ এক মিনিটের জন্যও এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না: গয়েশ্বর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৪:৩৬:০০ অপরাহ্ন
মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় না করে ঘরে ফিরবে না : খসরু
স্টাফ রিপোর্টার ঃ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ১৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিএনপি’র রোডমার্চ সিলেট এসে পৌঁছে। সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে দলের নেতা-কর্মীরা করতালি দিয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানান।
এ সময় আলীয়া মাঠে আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতাকালে লংমার্চে নেতৃত্বদানকারী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মানুষ এই সরকারকে এক মিনিটের জন্যও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে লংমার্চে বিপুল উপস্থিতি-এ সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থার বহি:প্রকাশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর রায় আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশকে পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে রক্ষা করতে বলেছে। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে, দেশের মালিক জনগণ, দেশের মালিক ভারত না।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবিতে ভৈরব থেকে সিলেট অভিমুখে শুরু হওয়া তারুণ্যের রোড মার্চ কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট সরকারি আলিয়া মদারাসা মাঠের সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। গতকাল সিলেটের আবহাওয়া ছিল দুর্যোগপূর্ণ। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোডমার্চ ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। রোডমার্চ বিকেল ৪টায় সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে রোডমার্চ রাত পৌনে ৮টার দিকে সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছে। এর আগে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন। এর একটু পর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত পৌনে ৯টায় সমাবেশ শেষ হওয়া পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের এক দফা, এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ জীবনের বিনিময়ে রাস্তায় নেমেছে। মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় না করে ঘরে ফিরে যাবে না।’
‘বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর এক কথা শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইইউ ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশ ও সংস্থা গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার কথা বলার অর্থই হলো শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সূচিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী ও ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল ও খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন ও এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী ও হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস.এম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
প্রধান অতিথি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যের সময়ে মঞ্চের নিচে থেকে নেতাকর্মীরা সেলফি তুলতে দেখে তিনি হাস্যকৌতুক করে বলেন, ‘আমরা সেলফিবাজি করি না। শেখ হাসিনা বাইডেনকে অনুরোধ করে সেলফি তুলে পরে বড় বড় কথা বলেছেন!। ‘দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না, দেশে গণতন্ত্র নেই, বিদেশে অর্থ পাচার চলছে, দিনের ভোট রাতে হয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব জনগণের পক্ষে কথা বলছে। তারা সুষ্ঠু অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে। এই নির্বাচনে বাধা শেখ হাসিনা। তাই সংসদ বিলুপ্ত করে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবি আপনার-আমার আপামর জনতার। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করতে চাইলে মানুষ বসে আঙ্গুল চুষবে না।’
তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়া জন্য নয়, বিএনপির আন্দোলন জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার, ভোটের অধিকার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের, পাচার করা টাকা ফেরত আনার আন্দোলন।’
তিনি বলেন, সরকার পতনের জন্য আমরা এখনো হরতাল-অবরোধ দেইনি। তবে প্রয়োজনে ধাপে ধাপে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। সকলে সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেইসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।
‘বাংলার মানুষ ভোটচোরদের পরিকল্পনা চুরমার করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধান বক্তা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভোটচোরদের দিন শেষ। তাদের ভোটচুরির পরিকল্পনায় যেসব কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য আছেন তাদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের লুটেরা ব্যবসায়ী চক্রকে চুরমার করে দিতে হবে।’
সভায় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- এডভোকেট আশিক উদ্দিন, মামুনুর রশিদ মামুন, মিফতাহ সিদ্দিকী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, নজিবুর রহমান নজিব, হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, শামীম আহমদ, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মকসুদ আহমদ, এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন, শাহনেওয়াজ বক্ত তারেক, মির্জা সম্রাট হোসেন, মাহবুবুল হক চৌধুরী, শাকিল মোর্শেদ, আফসর খান, তাহসিন শারমিন তামান্না, নিগার সুলতানা ডেইজী, নিজাম উদ্দিন তরফদার, সুরমান আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন জীবন, সুদীপ জ্যোতি এষ, দেলোয়ার হোসেন দিনার, ফজলে রাব্বি আহসান প্রমুখ। সমাবেশে প্রধান অতিথি, প্রধান বক্তা সহ সকলে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের সমাবেশে উপস্থিত থাকায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সভা শুরুর পূর্বে মঞ্চ থেকে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন জাসাস এর শিল্পীবৃন্দ।