দিরাইয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেহাল দশা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৪:৫১:৪৪ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : দিরাই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ ক্লিনিক বন্ধ, অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ, কোথাও নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই, নলকূপ অকেজো, শৌচাগার নষ্ট এবং ক্লিনিকে যাতায়াতের রাস্তা খারাপ। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিপুল সংখ্যক লোক।
হাওর বেষ্টিত দিরাই উপজেলায় প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার লোকের বসবাস। যাদের অধিকাংশ জেলে ও চাষী। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজণন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে মাঠ পর্যায়ে জনবলসহ নানা সমস্যার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করা হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে মোট ৩০টি। এগুলোর অধিকাংশের অবস্থা জরাজীর্ণ ও বেহাল দশা। বর্ষাকালে ওইসব ক্লিনিকে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে অনেক ভবনের পলেস্তরা খসে পড়েছে। অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকেই রোগীদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
সরেজমিনে উপজেলার রফিনগর, ভাটিপাড়া, রাজানগর, সরমঙ্গল, করিমপুর, তাড়ল, জগদল, কুলঞ্জ ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আরো কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক একেবারেই ধসে পড়ে গেছে। বাকিগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, খোলা ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিনের বেশি আসেন না। সকাল ১০টা থেকে ১১টায় এলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান।
রফিনগর ইউনিয়নের নওয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা সামন্ত দাশ বলেন, এলাকার মানুষ অসুস্থ হলে নেই কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা। গর্ভবতী নারীরাও পান না কোনো সেবা। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় উপজেলা সদরের হাসপাতালে নিতে পোহাতে হয় নানান ঝক্কি ঝামেলা। তাই সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দাবি হাওরাঞ্চলবাসীর।
করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আব্দুল আওয়াল মিয়ার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পূর্বে ওই ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন ধসে পড়েছে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। এতে এলাকার গরিব মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন চন্দ্র দাশ বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকলে চিকিৎসা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। আমাদের ইউনিয়নে মানুষের সেবার জন্য তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর একটি ক্লিনিক করিমপুর গ্রামে। বর্তমানে সেটি ভাঙ্গা ও কার্যক্রম চালানোর অযোগ্য। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেছি। তারা অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন। ক্লিনিকটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াসিন আরাফাতের ভাষ্য, কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান আরও বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এতে সেবার মান আগের চাইতে অনেক ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জরাজীর্ণ ভবনগুলো মেরামতযোগ্য, ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন ক্যাটাগরিতে তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এ বিষয়েও শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বর্তমানে ঔষধের কোন সঙ্কট নেই। বিনামূল্যে ঔষধ পাচ্ছেন মানুষ।