নগরীতে স্ত্রীসহ দুই কন্যাকে হত্যার দায়ে ঘাতক হাসানের ফাঁসি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৪:৫৮:১৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট নগরীর ঝালোপাড়ায় স্ত্রী জনি আক্তার শিউলি ও দুই সন্তানকে হত্যার দায়ে ঘাতক হাসান মুন্সি ওরফে কামরুল হাসানকে (৪৪) ফাঁসির দন্ড দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরে আলম ভূঁইয়া এ রায় প্রদান করেন।
দ-প্রাপ্ত হাসান মুন্সি গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার খালপার কমলাপুরের নজরুল মুন্সির ছেলে। ঘটনার সময় সে নগরের ঝালোপাড়ায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো।
সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট জুবায়ের বখত সিলেটের ডাককে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ত্রিপল মার্ডার মামলা হিসেবে এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। আসামি হাসান মুন্সী তার স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে হত্যা করে।
রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
জানা গেছে, নগরের ঝালোপাড়ার খেয়াঘাট গলির প্রবাসী কামাল মিয়ার আধাপাকা ঘরের বাথরুম থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সকালে গৃহবধূ জনি আক্তার জয়নব ওরফে শিউলি (৩৫), তার কন্যা মিম (১৫) ও তাহসিন (১৩) এর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত শিউলীর চাচাতো ভাই বাদশা মিয়া বাদি হয়ে নিহতের স্বামী হাসান মুন্সিসহ অজ্ঞাতনামা ৫ জনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় পরদিন ১ আগস্ট দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-০১।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বাদী বাদশা মিয়া এজাহারে উল্লেখ করেন ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সন্ধ্যার পর তিনি জানতে পারেন হাসান মুন্সি তার চাচাতো বোন ও দুই ভাগ্নিকে ২৬ থেকে ২৮ জুলাইর মধ্যে যে কোনো সময় শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর বাসার বাইরের দরজায় তালা মেরে পালিয়ে গেছে। ৩০ জুলাই সকালে আশেপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ঘরের দরজা ভেঙে বাথরুম থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডের ১৬ বছর পূর্বে জনি আক্তার এর সাথে হাসান মুন্সির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বসবাস করতো। তাদের সংসারে প্রথম কন্যা সন্তান হওয়ার পর শিউলিকে নিয়ে হাসান মুন্সি গ্রামে চলে যায়। পরে রাজধানী ঢাকার একটি গার্মেন্টসে ২ বছর কাজ করে। এরপর তাদের সংসারে আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ঘটনার প্রায় ১৫ দিন আগে হাসান স্ত্রী ও দুই কন্যাকে সাথে নিয়ে সিলেট নগরীর কালিবাড়ি এলাকায় স্ত্রীর চাচাতো ভাই বাদশা মিয়ার বাসায় ওঠে। ওই বাসায় দুই দিন অবস্থানের পর দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়ার একটি কলোনিতে বাসা ভাড়া নেয় হাসান। এরপর ঝালোপাড়ার বাসায় বসবাস করতে থাকে। স্ত্রী জনি আক্তার জয়নব ওরফে শিউলির সাথে ঘটনার রাতে স্বামী হাসান অন্তরঙ্গ মুহূর্ত তৈরির চেষ্টা করলে এতে শিউলি অসম্মতি জানান। এ ঘটনায় হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর দুই কন্যাকেও হত্যা করে হাসান মুন্সী।
ট্রিপল মার্ডারের এই ঘটনার তদন্ত করতে প্রথমে দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই লোকমান আহমদকে দায়িত্ব দেয়া হলেও পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইর পরিদর্শক কামরুজ্জামানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত শেষে তিনি ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একমাত্র হাসান মুন্সিকে অভিযুক্ত করে আদালতে বহুল আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন।
এরপর মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত মহানগর জজ আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পরবর্তীতে সাক্ষীদের মধ্যে ১২ জন সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য দেন। এরপর মামলার যুক্তিতর্কসহ সকল প্রক্রিয়া শেষে গতকাল দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরে আলম ভূঁইয়া চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যার দায়ে ঘাতক হাসান মুন্সীকে ফাঁসির রায় দেন আদালত। এছাড়াও রায়ে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডও দেয়া হয়েছে।