বিদ্যুৎ ও স্মার্ট বাংলাদেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৪:০১ অপরাহ্ন
গোলাম সারওয়ার
বিদ্যুৎ ছাড়া দেশ চলে না। বিদ্যুতের ব্যবহার এখন সর্বত্রই প্রযোজ্য। বিদ্যুৎ ছাড়া প্রথম যে সমস্যা সেটি হচ্ছে পানি। নাগরিক জীবনে বিদ্যুৎ ছাড়া পানি সরবরাহ করতে পারে না সিটি কর্পোরেশন। পানি না থাকলে জীবনটাই অচল। অচল বলতে সকল ক্ষেত্রেই অচল।
সিলেটে বিদ্যুৎ সমস্যা সবচেয়ে বেশি। দিনে এবং রাতে কমপক্ষে ৬ বার বিদ্যুৎহীন করে রাখা হয় এবং প্রতিবারে দেড় ঘন্টা অর্থাৎ ৬ বারে ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে সিলেট অঞ্চল। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কথা বলে না। প্রশাসন তো নীরবই থাকে, নেতৃস্থানীয়রাও নীরব থাকেন।
বাংলাদেশ সরকার দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ১৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি বা ঋণ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছেই ৬৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের পাওনা। সরকারের এ পাওনা মিটানো দূরে থাক বিদ্যুতের চাহিদাই মেটাতে পারছে না। দিন দিন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তলিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নটা কীভাবে পূরণ হবে ভেবে পাই না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রথমেই বিদ্যুৎ থাকা দরকার। বিদ্যুৎ না থাকলে স্বপ্ন, কল্পনা বাস্তবের মুখ দেখবে না কখনো।
সরকার বড় বড় প্রকল্প করেছে কিন্তু বিদ্যুতের উন্নয়নে কোনো কর্মকান্ড করেনি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার ব্রিজ এদেশের সাধারণ জনগণের খুব প্রয়োজন আছে বলে আমাদের মনে হয় না। এসব বড় বড় প্রকল্প করতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি ছাড়িয়ে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ক্রস করেছে। দেশের অর্থ প্রবাহ হয়তো বেড়েছে কিন্তু তারচেয়ে বেশি বেড়েছে দুর্নীতি এবং দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে।
বাংলাদেশের সকল প্রকল্পই চার ভাগের ১ ভাগে হয়ে যায়। বাকী ৩ ভাগই লুট হয়। পদ্মাসেতু কিন্তু ১০ হাজার কোটি টাকায়ই সম্পন্ন হয়েছে। বাকীগুলো লুটপাটই হয়েছে বলে গবেষকদের ধারণা। ঠিক তেমনিভাবে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ৩০% টাকায়ই করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পের সেভেনটি পার্সেন্ট টাকাই লুটেরাদের পকেটে চলে যায়। পকেটে মানে পকেটে তো নয়, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা বা বিদেশের যে কোনো দেশে পাচার হয়ে যায় বাংলার এই টাকা।
চীন-জাপানে প্রকল্পের টাকায় কী হয়? এরা প্রকল্পের টাকার মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে শুধু নয়, এরা প্রকল্পের বাদ বাকী টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়। আর আমরা করি এর উল্টো। যেখানে ৩ টাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ হয় সেখানে ১০ টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়।
আমরা মনে করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে জনস্বার্থের কাজগুলো বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে। যেখানে সড়ক নেই সেখানে সড়কের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে ছোট্ট একটা পুল বা কালভার্টের জন্য জনগণের যাতায়াতে বিঘœ হচ্ছে সেখানে পুল-কালভার্টের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি আছে কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। সেখানে বিদ্যুতের জোগান দিতে হবে। তবেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
সরকার ১৩২টি রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বা ভর্তুকি দিয়ে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের পাওনা ১ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এসব প্রতিষ্ঠান যদি ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারে না বা ঋণের টাকা ফেরত দিতেও নারাজ তাহলে এদের ভর্তুকি দিয়ে লাভ কি? এরা যদি ঋণের টাকা ফেরত দিতে আন-স্মার্ট থাকে তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে কী করে? সরকার ধরে নিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রাণ। এদের জীবিত না রাখলে বাংলাদেশ বাঁচানো যাবে না। তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশের অনেক লিকেজ পয়েন্ট রয়েছে। এই লিকেজ পয়েন্টগুলো বন্ধ না করলে তো টাইটানিকের মতো ডুবে যাবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে তো এদের লিকেজ পয়েন্ট বন্ধ করতে হবে।
লিকেজ পয়েন্ট বন্ধ করার প্রথম পয়েন্ট হচ্ছে সততা। সততা থাকলে দুর্নীতি একদিন বিদায় হবেই হবে। কিন্তু আমরা সৎ থাকতে চাই না। দুর্নীতি করে রাতারাতি বড় লোক হতে চাই। এই মন-মানসিকতা ত্যাগ না করলে কি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া যাবে?
আসুন আমরা সবাই একটা জায়গায় মনোযোগী হই। বিদ্যুৎ উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া দরকার। স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধ-শতাব্দী পরেও যদি বিদ্যুৎ সেক্টরের প্রতি নজর না দেওয়া যায় তবে তো এ জাতি অন্ধকারেই থাকবে। আলোর মুখ দেখতে হলে বিদ্যুৎ উন্নয়নে মনোযোগ বাড়ানো অবশ্যই দরকার। এক্ষেত্রে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়াই যাবে না।
বিদ্যুৎ শুধু ফ্যানের বাতাস খাওয়ার জন্য নয়। বিদ্যুৎ আমাদের জীবন-জীবিকারও একটা বড় অনুষদ। বিদ্যুতের ওপর ভর করে আমাদের অর্থনীতি অনেকটা অংশ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থনৈতিক অনেক কর্মকান্ড এই বিদ্যুতের ওপর ভর করে আছে। তাই এই মুহূর্তে সকল মেগা প্রজেক্ট বন্ধ করে বিদ্যুতের উন্নয়নে জোর দেওয়া অতি আবশ্যক বলে আমরা মনে করি। আর এক্ষেত্রে অবশ্যই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।
লেখক : কলামিস্ট।