ট্রান্সফরমার চুরি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫২:৩৯ অপরাহ্ন
ভীরুরা মরার আগে বারে বারে মরে। সাহসীরা মৃত্যুর স্বাদ একবারই গ্রহণ করে। -উইলিয়াম শেক্সপিয়র
বন্ধ হচ্ছে না ট্রান্সফরমার চুরি। সারা দেশেই ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। এর ফলে বিঘিœত হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যৎ সরবরাহ। একে তো অসহনীয় লোডশেডিং, তার ওপর এই ট্রান্সফরমার চুরির ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের যন্ত্রণা চরম আকার ধারণ করেছে। অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এসব চুরির সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আর ট্রান্সফরমার চুরি হলে মূল্য পরিশোধের পরও ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
আমাদের দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমে এই ট্রান্সফরমার চুরি একটি বড় বিপর্যয়। দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেমে বর্তমানে ছোট-বড় ৩০ থেকে ৪০ লাখ ট্রান্সফরমার রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ট্রান্সফরমার আছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবি’র অধীনে। আরইবির ট্রান্সফরমারগুলোর বেশিরভাগ ছোট ছোট সিলিন্ডারের মতো হওয়ায় সেখানে চুরির ঘটনা বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করছে একটি শক্তিশালী চক্র। সেগুলো রিসাইক্লিং করে নতুন মোড়কে ফের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। জানা যায়, দেশে অর্ধশত
অসাধু ট্রান্সফরমার উৎপাদন ও রিপেয়ারিং কোম্পানি গড়ে ওঠেছে। এরাই নামে-বেনামে গ্রাহক ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করছে নিম্নমানের ট্রান্সফরমার। চুরি করা ট্রান্সফরমার ক্রয় করছে উৎপাদনকারি কোম্পানি ও রিপেয়ারিং ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট। সঙ্গে আছে পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির অসাধু লোকজন। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, চুরি করে আনা এসব স্পেয়ার্স পার্টস দিয়ে নতুন ট্রান্সফরমার তৈরি হওয়ায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যার কারণে ছোট আঘাত, পাখির ঝাপটা কিংবা হালকা ঝড়-বাতাসে বিস্ফোরিত হচ্ছে ট্রান্সফরমার। সাধারণত ট্রান্সফরমার চুরি হলে নতুন ট্রান্সফরমার পেতে গ্রাহককে অর্ধেক ও পল্লী বিদ্যুৎকে বাকি অর্ধেক টাকা দিতে হয়। দ্বিতীয়বার চুরি হলে পুরো টাকাই গ্রাহককে দিতে হয়। এতে পল্লী বিদ্যুতের চেয়ে গ্রাহকের ঝুঁকি ও ক্ষতি বেশি।
সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, এসব চুরি ঠেকাতে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার তৎপরতা বাড়ানো। একই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন করে তুলতে হবে। এই চক্র কারসাজি করে যাতে পার পেতে না পারে, সেজন্য নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। চক্র বা আরইবির অসাধু কর্মচারিরা যদি দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায়, তাহলে ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে যতোই পদক্ষেপ নেওয়া হোক