পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিসিক মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ
মাত্র ১০০ ফুট ভাঙ্গা রাস্তার জন্য অসহনীয় দুর্ভোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৪:৩৫:৩০ অপরাহ্ন
নূর আহমদ:
মারাত্মক ভঙ্গুর এই দৃশ্যটি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নবগঠিত ৩৮ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত মইয়ারচর-চাতলীবন্দ-চাতল এয়ারপোর্ট বাইপাস সড়কের নাজিরেরগাঁও অংশের। এটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর নির্বাচনী এলাকাও। মাত্র ১০০ ফুট রাস্তা সংস্কারের অভাবে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। শুধু তাই নয়, মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কের এই অংশটি। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও মসজিদের মুসল্লিরা মসজিদে যেতে পারছেন না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এয়ারপোর্ট বিদেশগামী যাত্রীদের। সিটি কর্পোরেশন কিংবা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কোন দপ্তরই সড়কের এই ভাঙ্গা অংশটি সংস্কারের পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে রাস্তাটির মেরামত কাজের প্রায় ৭০ লাখ টাকার টেন্ডার হয়ে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, ঠিকাদার অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ায় কাজ ধরছেনা। অন্যদিকে, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, আগামী সোমবার তিনি স্পট পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাদাঘাট রোড থেকে মইয়াচর-চাতল-নালিয়া-লাখাউরা-এয়ারপোর্ট সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কটি বিদেশযাত্রীদেরও বিকল্প রোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আম্বরখানা- মদীনা মার্কেট তথা নগরীর যানজট এড়াতে সুনামগঞ্জগামী কিংবা বিদেশ ফেরত যাত্রীরা এই সড়কে চলাচল করেন। আবার কুমারগাঁও বাইপাস সড়ক দিয়ে দক্ষিণ সুরমা বা অন্য জেলায় যাতায়াতকারীরাও এই সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পিচঢালাই উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নবগঠিত ৩৮ নং ওয়ার্ডের নাজিরেরগাঁও অংশের প্রায় ১০০ ফুট রাস্তার বেহাল দশা। একপাশের পানি অন্যপাশে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় সড়কের উপর দিয়েই পানি প্রবাহিত হয়। ফলে, রাস্তার উপর দিয়ে পানি যেতে যেতে রাস্তা খালের রূপ নিয়েছে। আর এতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এলাকার লোকজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও কেউ যেন সাড়া দিচ্ছেন না।
অপরদিকে, রাস্তাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি সিলেট সদরের আওতাধীন। এলজিইডি সিলেট সদরের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে মইয়ারচর থেকে চাতল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পূর্ণ মেরামত করার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের জুন এর মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঠিকাদারদের গাফিলতির জন্য কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা।
জানা গেছে, একটি প্যাকেজে মইয়ারচর-চাতল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ও লাখাউরা ইউনুস মিয়া মার্কেট থেকে বাঘমারা সড়কের ৬০০ মিটার রাস্তার কাজ পায় মোশাহিদ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোশাহিদ আলীর পুত্র মুসলেহ উদ্দিন। তবে মুসলেহ উদ্দিন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন।
এলজিইডি সিলেট সদরের সার্ভেয়ার জামাল উদ্দিন জানান, ঠিকাদার মুসলেহ উদ্দিন অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে তার ভাই কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জানিয়ে যান। কিন্তু তার ভাইকেও পাওয়া যাচ্ছেনা। তাগিদ দেয়ার পরও তারা কাজ শুরু করছেননা।
উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী খালেদ হোসেন খাদিম জানান, গত জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের দোহাই দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সময় চায়। তিনি জানান, ঠিকাদার অস্ট্রেলিয়া চলে গেলেও তার দায়িত্বপ্রাপ্তদের আমরা একমাস সময় দিয়ে চিঠি দিয়েছি। এই ১ মাসের আর মাত্র ১০/১২ দিন আছে। এরমধ্যে যদি কাজ শুরু না করে তাহলে তাদের জামানতের অর্থ সরকারি কোষাগারে চলে যাবে। এরপর দ্রুততম সময়ে মধ্যে পুনরায় দরপত্র আহবান করে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
এব্যাপারে মোশাহিদ কনস্ট্রাকশনের কর্ণধার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: মোশাহিদ আলী জানান, তার যে ছেলে ঠিকাদারী দেখাশোনা করে সে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে। কথা ছিলো অপর ছেলে কাজ করবে, সেও লন্ডনে যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এই অবস্থায় মানুষ দিয়ে কাজ তদারকি করবেন কিনা ঠিক করতে পারছেন না। তবে সড়কটির কাজ করার তার আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে।
অপরদিকে, ৬ নং টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শফিকুর রহমান জানান, মইয়ারচর-চাতল-এয়ারপোর্ট সড়কের নাজিরেরগাঁও অংশটি একসময় টুকেরবাজার ইউনিয়নে ছিলো। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। এই সড়ক দিয়ে টুকেরাবাজার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চাতলীবন্দ-চাতল গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে নিত্য যাতায়াত করতে হয়। বিমানবন্দরগামী যাত্রীদেরও চাপ থাকে সড়কে। মাত্র ১০০ ফুট সড়কের জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। তিনি বলেন, সড়কটি দিয়ে পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও মসজিদের মুসল্লীরা চরম দুর্ভোগ পোহান। জলাবদ্ধতার পানি গাড়িতে ঢুকে বিকল হয়ে পড়ছে গাড়ি। এতে যান চলাচল কমে গেছে সড়ক দিয়ে। শফিকুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতা সিটি কর্পোরেশন অংশে পড়ায় মেয়রের সাথে এলাকাবাসীকে নিয়ে সংস্কারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এলাকাবাসী পরারষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় তারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। মেয়র দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি গতকাল শুক্রবার রাতে এলাকার মুরব্বীদের নিয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে দেখা করেছেন। তিনি দ্রুত পদক্ষেপের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী সোমবার সিসিকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।