বিশ্ব নদী দিবস পালন
সিলেট বিভাগের নদ-নদী রক্ষা ও দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৪৮:০৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সারা দেশের মতো গতকাল রোববার সিলেট বিভাগেও বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সিলেট বিভাগের জেলা শহরগুলোর অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নদী। নদীই ছিল যাত্রী, পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। অথচ গত ৫০ বছরে বেশিরভাগ নদী হারিয়ে গেছে। যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও দখলে, দূষণে সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। দখল -দূষণ ও নানাবিধ অত্যাচারে বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বেশীরভাগ নদী। সেই নদী রক্ষায় প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। দখল ও দূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
নদী পরিব্রাজক দল সিলেট:
নদ-নদী রক্ষায় ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সিলেটে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে নদী পরিব্রাজক দল সিলেটের আয়োজনে ক্বীন ব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদী তীরে (সার্কিট হাউসের সামনে) নদী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে র্যালী ও নদী আড্ডার আয়োজন করা হয়।
নদী পরিব্রাজক দল সিলেটের সভাপতি আদিল হোসেন এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ ফাহিম এর পরিচালনায় র্যালীতে যোগ দেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বকস লিপন।
উপস্থিত ছিলেন সিসিকর ৪নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল সিলেটের দপ্তর সম্পাদক শেখ তোফায়েল আহমদ সেপুল, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল সিলেটের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান এরশাদ, এডভোকেট শাহিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ শাহ আদনান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জর মো. গৌছ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এস. এ. শফি, পাঠচক্র সম্পাদক হাবিবুন্নবী সাহেদ, কার্য নির্বাহী সদস্য আব্দুর রহমান তুহিন, ফজলুল করিম রাসেল প্রমূখ।
নদী আড্ডায় নদী রক্ষায় নদীর অবৈধ দখল ও পানি দূষণ রোধে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের উপর আলোকপাত করা হয়। এছাড়া জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
হবিগঞ্জে যৌথ কর্মসূচী পালন:
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জে ‘ছবি দেখি, নদী চিনি’-কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও হবিগঞ্জ চারুকলা একাডেমি যৌথ আয়োজনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
হবিগঞ্জের বাডস কেজি এন্ড হাইস্কুলে বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ২২ জন চিত্রশিল্পী বড় ক্যানভাসে জেলার বিভিন্ন নদীর ছবি অঙ্কন করেন। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঘুরে ঘুরে অঙ্কিত ছবি দেখেন।
খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাডস কেজি এন্ড হাই স্কুলের অধ্যক্ষ নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর। বক্তব্য রাখেন-হবিগঞ্জ চারুকলা একাডেমির অধ্যক্ষ আশিস আচার্য , পরিবেশ কর্মী সাইফুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, চিত্রশিল্পী মোঃ লোকমান মিয়া, নার্গিস আক্তার মিশপা, তন্বী দাস, পুষ্পিতা দাস, সৃজন বৈদ্য, অলক গোপ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, একসময় হবিগঞ্জে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নদ-নদী। জেলা শহর থেকে বিভিন্ন স্থানে ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নদী। নদীই ছিল যাত্রী, পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। অথচ গত ৫০ বছরে বেশিরভাগ নদী হারিয়ে গেছে। যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও দখলে, দূষণে সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। দখল-দূষণ ও নানাবিধ অত্যাচারে বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে হবিগঞ্জের বেশীরভাগ নদী। অথচ ৫০ বছর আগে এই অঞ্চলে ৬৯ টি নদী সচল ছিল। এসময় বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনে নদীগুলোর নাম প্রদর্শন করা হয়।
বাপা কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, খোয়াই নদীর তলদেশ অনেক উঁচু হয়ে পড়েছে। এই নদী থেকে যন্ত্রদ্বারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি , বালু উত্তোলনের কারণে নদীটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। বর্ষা মৌসুমে মানুষকে থাকতে হয় বন্যা আতঙ্কে।
পুরাতন খোয়াই নদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করা উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রশাসন। সে সময় প্রায় ১ কি: মি: এলাকা থেকে কয়েকশো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয। প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একসময় উচ্ছেদ কার্যক্রম থেমে যায়!
তোফাজ্জল সোহেল আরো বলেন, হবিগঞ্জে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা কল-কারখানাগুলো বেপরোয়াভাবে দূষণ চালিয়ে আসছে গত এক দশক ধরে। যা মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের উপর প্রত্যক্ষ আঘাত। অথচ দূষণ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না, বরং দিনের-পর-দিন দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। কৃষিজমি খাল, ছড়া এবং নদীসহ সকল প্রকার জীবন ও জীবিকা মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। সুতাং নদী সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। দূষণের কারণে নদী ও হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণী! এই দূষণ মেঘনা হয় সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত হচ্ছে। শিল্পবর্জ্য দূষণ রোধসহ হবিগঞ্জের নদ- নদী রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।