পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ নগরীতে বর্ণাঢ্য র্যালি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৫৮:৪৯ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : আজ বৃহস্পতিবার, ১২ রবিউল আউয়াল। এ দিন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুল্লিল আলামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদীনা জগৎকূল শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্বে ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে এ দিনের সুবহে সাদেকের সময় মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আসেন এই ধরায়। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃ¯েœহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠেন তিনি। চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নবুওতের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য, বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু, অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসুলের (সা.) উপর নির্যাতন শুরু করে। বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকেন।
অন্যদিকে, কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসুল (সা.) কে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসুল (সা.) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং ‘মদীনা সনদ’ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। ‘মদীনা সনদ’ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খ্রীষ্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় সমান্তরালে । ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক (সা.) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে। তিনি বলেন, আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো, তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হলো। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাঁকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পন্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত দ্য হান্ড্রেড গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইতো। তাঁর আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে। প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করে মুসলিম বিশ্ব। এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে রাসুল প্রেমিকরা নবীজীর জীবন ও জীবনী আলোচনা করেন এবং কাসীদা পড়ে থাকেন। মিষ্টি খাবার প্রভৃতি তৈরি করে বিতরণ করেন কেউ কেউ। রাসুল প্রেমিকরা ভক্তিভরে দরুদ পাঠে মশগুল থাকেন। প্রাণের আবেগ মেখে পড়েন ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি/কাশাফাত দুজা বিজামালিহি/হাসুনাত জামিউ খিসালিহি/সাল্লু আলাইহি ওয়ালিখি’।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাসুল (সা.)-এর সীরাতের উপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্র অফিসসমূহে ছুটি থাকবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঃ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী। শুরুতে পবিত্র কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা শুয়াইবুর রহমান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড অফিসার আব্দুল বাকীর পরিচালনায় আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন, আলোচনা পেশ করেন ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি সিলেটের উপ-পরিচালক শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রকৃত মুসলমান হতে হলে মহানবী (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত থাকতে হবে। পারস্পরিক আচরণে ধর্ম গোত্র ব্যতিরেকে মহানবী (সা.) যে সুমহান আদর্শ রেখে গেছেন তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আলেম উলামারা হচ্ছেন নায়েবে রাসুল। সমাজে আপনাদের সম্মান এবং অবস্থান অনেক উঁচুতে। শান্তি সমৃদ্ধি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকে সে দিকে সমাজের মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আজ আমরা মহানবীর শিক্ষা থেকে অনেক দূরে চলে গেছি।পরে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মহর অগ্রগতি কামনা করে মোনাজাত করেন মাওলানা আজির উদ্দিন। সব শেষে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।