নির্বাচিত সরকারই নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নেবে : প্রধানমন্ত্রী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ৫:১৫:১৩ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন ভোটের অধিকার জনগণের হাতে। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই সরকার গঠন করবে। কাজেই নির্বাচিত সরকারই নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (সিজি) অধীনে নির্বাচনের জন্য বিএনপির দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল শনিবার প্রচারিত ভয়েস অফ আমেরিকার (ভোয়া) বাংলা সার্ভিসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এই মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। এখন আমাদের সংবিধানও জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করে। নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে একটি নির্বাচিত সরকার (ক্ষমতায়) আসবে।’
সাক্ষাৎকারকারী প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূরক প্রশ্ন করেন: ‘আপনি বলছেন সংবিধানে (সিজি) এর কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করার জন্য সংসদে তো আপনার প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আপনি কি সংবিধান পরিবর্তন করে সিজি আনার কোনও উদ্যোগ নেবেন? নাকি বিরোধী দলের সঙ্গে কোনও আলোচনা করবেন?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় তারা (বিএনপি) এর (সিজি) বিরোধিতা করত, এখন তারা দাবি করছে, কিন্তু ভবিষ্যতে তারা কী করবে তা নিশ্চিত নয়। তাছাড়া বিএনপি এই (সিজি) ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা হাইকোর্টের বিচারকদের বয়স বাড়ানো, ১.২৩ কোটি ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ ইচ্ছেমতো সরকার বসানোর জন্য নানা ধরনের অপকর্ম করেছে। কোনোটাতেই কাজ হয়নি, কারণ জনগণ তা মেনে নেয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যখন ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে যায়, তখন আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (সিজি) জন্য আন্দোলন করেছিলাম। যখন ভোট চুরি হয়েছিল, তখন জনগণ তা চেয়েছিল (সিজি)। তখন বিএনপি নেত্রী (বেগম খালেদা জিয়া) বলেন, পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়, এটা তাদের বক্তব্য। তারা এর বিরুদ্ধে ছিল।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিষয় ছিল ২০০৮ সালে সিজির অধীনে নির্বাচন হয়েছিল, কারণ বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তাদের বিভিন্ন অপকর্মের কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, মানি লন্ডারিং এবং জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।
তিনি আরও বলেন, তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার (সিজি) আসে। কিন্তু তারা দুই বছর নির্বাচন দেয়নি, বরং আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন তাও সিজির অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেই নির্বাচনে বিএনপি কতটি আসন পেয়েছিল?
তিনি আরও বলেন, জামায়াতসহ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছে এবং তারপর তারা পুনরায় নির্বাচনে আরেকটি আসন পায়, ফলে তাদের আসন সংখ্যা ৩০ হয়। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে তারা এই পরিস্থিতির প্রত্যক্ষ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ জন্য তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন এবং তা বানচাল করতে আগুন সন্ত্রাস করেছিল।’
আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা ৩ হাজারের বেশি মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, হাজার হাজার গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে, ৫০০ টিরও বেশি ভোটকেন্দ্র ও স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে, বোমা মেরে আদালতে বিচারক হত্যা করেছে।
তারপর ২০১৮ সালের নির্বাচন এলো এবং তারা এতে অংশগ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩০০টি আসনে প্রায় ৭৫০টি মনোনয়নপত্র ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ, একটি মনোনয়ন এসেছে লন্ডন থেকে, আরেকটি তাদের গুলশান অফিস থেকে এবং অন্যটি এসেছে পুরানা পল্টন অফিস থেকে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে, যখন প্রতিটি আসনে দুই বা তিনজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল, তারা গন্ডগোল করে নির্বাচন থেকে সরে যায়। সে নির্বাচনেও তারা ব্যর্থ হয়। নির্বাচনে তারা মাত্র কয়েকটি (সিট) জিতেছে।’
বিএনপি কখনোই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করেনি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।
তিনি জানতে চান ‘তারা হঠাৎ সিজির দাবি করছে কেন? প্রশ্ন হল- তাদের নেতা কে? জনগণ কাকে ভোট দেবে? জনগণ এমন একজন নেতা দেখতে চায়, যিনি ভোট দিলে আগামীতে এই দেশ পরিচালনা করবেন। এমন কাউকে সামনে আনতে পেরেছেন যাকে নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন?
শেখ হাসিনা বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট আছে, কিন্তু তাদের নেতৃত্ব কোথায়, যারা দেশ পরিচালনা করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘তৃতীয় বিষয় হলো নির্বাচন। এটা জনগণের ভোটের অধিকার।’
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে সরকার গঠিত হয় এবং আজ ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্থিতিশীল পরিস্থিতি রয়েছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-, সংঘাত, আগুন সন্ত্রাসসহ অনেক কিছুই করা হয়েছে অস্থিতিশীল করার জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশ যখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, তখন তা বাস্তবায়ন করা একান্ত অপরিহার্য। যেখানে আমাদের একটি নির্বাচিত সরকার দরকার, সেখানে মাঝখানে আমি কি অনির্বাচিত সরকার আনব?