শাল্লায় দেশী মাছের সংকট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ৭:১৮:০১ অপরাহ্ন
শাল্লা (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের শাল্লাসহ হাওর অঞ্চলে এখন আর আগের মতো দেশী মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। নানা কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকজন দেশী মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মাছের উৎপাদন কমে আসার কারণ হিসেবে নানা বিষয় তুলে ধরছেন হাওরপারের লোকজন।
শাল্লার ছায়ার হাওর, খোয়ার হাওর, সতুয়া নদী, সোনাকানী বিল, ভান্ডা বিল, চিনামারা বিল, হারিয়া বিল এবং বড় হাওরের ধান বাঁচাতে বিলের সবদিকে বাঁধ দেয়া হয়। এই বাঁধের কারণে মাছ ঢুকতে পারছে না। যেগুলো আছে সেগুলোও চলাচল করতে পারে না। ফলে শুষ্ক মৌসুম বিল সেচেও তেমন মাছ পাওয়া যায় না।
ধান রক্ষায় অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের জন্য মাছের প্রজণন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধের কারণে মাছ ইচ্ছা মতো পানিতে ঘুরে বেড়াতে পারছে না। এ কারণে হাওরের মাছ কমে যাচ্ছে। রোগবালাই থেকে রক্ষার জন্য ধান গাছে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগও হাওরের মাছ কমে যাওয়ার কারণ।
জেলেরা বলছেন, আমরা এখন আগের মতো মাছ ধরতে পারছি না। আমরা হাওরাঞ্চলের অনেক মানুষ যারা মাছের উপর ভরসা করে চলতাম এখন আর চলতে পারছিনা। এজন্য বউ বাচ্চা নিয়ে বিপদে আছি।
দাউদপুর বাজারের মৎস্য আড়তের মালিক মোহাম্মদ আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, ভাটির হাওর এখন মাছ শূন্য। মাছ নেই বললেই চলে। আমাদের ব্যবসাও খুব মান্দা। এলাকার অনেক কৃষকের ভাষ্য, উচ্চফলনশীল ধান ফলানোর প্রতিযোগিতায় নেমে আমরা অতিরিক্ত সার, অতিমাত্রায় কীটনাশক দিয়ে নিধন করছি মাছ ও মাছের প্রজণন।
অন্যদিকে অবাধে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন হচ্ছে। অবাধে বিক্রি হচ্ছে রেণু পোনা, কেউ বাধা দিচ্ছে না। মাছের প্রজাতির বিলুপ্তি ঠেকাতে ও উৎপাদন বাড়াতে অবশ্যই পোনা মাছ এবং ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ক্ষতিকর জালের ব্যবহারও। হাওর এলাকায় এসব কেউ মানছে না।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক যুগ আগেও প্রায় ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে বেশকিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে আরও কিছু প্রজাতি।
সংকটাপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- বাছা, বেদা, ছেপচেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, কুঁচে, নাপতে কই, বাতাসিয়া টেংরা, ফলি ও গুজিআইড়। আর বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- গুলশা, গনিয়া, দাড়কিনা, আইড়, পাবদা, বড় বাইম, গজার, তারাবাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা ও কালিবাউশ দারপিনা।
নিজগাঁও বাজারকান্দি (মিলন) বাজারের দুই মাছ ব্যবসায়ী জাকির হোসেন এবং পাত্তর আলী বলেন, আজকাল দেশী মাছ চোখের সামনে নেই বললেই চলে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নদীর মাছ আগে হাওর ও বিলে গিয়ে আশ্রয় নিতো। এখন বাঁধের কারণে নদী থেকে হাওর বা বিলে যেতে পারছে না মাছ।