দিরাইয়ে সবজির বাজারে আগুন সাধারণ ক্রেতারা দিশেহারা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২৯:১৯ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : হাওরাঞ্চলে নিত্যপণ্যের বাজার আগুন হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে সব ধরনের সবজির দাম। একই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দামও। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আবারও অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। সবজিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা।
গতকাল সোমবার দিরাই পৌর শহরের কাঁচা বাজারে প্রতি কেজি বরবটি ও টমেটো বিক্রি করা হয় ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়, গাজর একধাপ এগিয়ে ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায় আর কাকরোল ৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়। শীতকালীন সবজি মূলা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানীরা।
অন্যদিকে, ধুন্দল ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা কেজি, মুকি ৭০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি করে।
আবারও কাঁচা মরিচের ঝাঁঝ বেড়েছে। গত কিছুদিন কাঁচা মরিচের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও গত দু-তিন ধরে হঠাৎ করেই ১০০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ এক লাফে ২৫০ টাকায় গিয়ে উঠেছে। কাঁচা মরিচের এমন দাম বৃদ্ধিতে অনেক ভোক্তা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন।
দাম বৃদ্ধির দিক দিয়ে শাকও পিছিয়ে নেই। এক আঁটি লাল শাক কিনতে হলে এখন ক্রেতাকে গুনতে হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এক আঁটি পুঁই শাকের দামও ৫০ টাকা। তাছাড়া এক আঁটি কলমি শাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে সকল দোকানে বস্তা বস্তা আলু পড়ে থাকতো। দামও ছিল একেবারে কম। কিন্তু এই আলু এখন আর আগের মতো সকল দোকানে পাওয়া যায় না। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রির অজুহাতে অনেক দোকানী আলু আমদানি করছেন না। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে, আবারও হঠাৎ করেই বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কয়েক দিন আগেও প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু এখন পেঁয়াজের ঝাঁঝও বেড়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
আমদানির ঘোষণার পরও দাম কমেনি ডিমের। এখনো প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এছাড়াও রসুন, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, জিরা, আদা, এলাচিসহ সকল জাতের গরম মসলার দামও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। দেশি চিনির আকাশচুম্বী দামের ফলে ভারত থেকে চোরাইপথে আসা চিনি এখন দোকানে দোকানে। শিশু খাদ্যের দামও বেড়েছে। একবার দাম বৃদ্ধি করেই ব্যবসায়ীরা ক্ষান্ত হচ্ছেন না। অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করছেন।
ভোক্তাদের অভিযোগ, নিয়মিত কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ভোক্তারা জানান, বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে ভোক্তাদের অসহনীয় কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। আর সবজির দাম বাড়লে তো কথাই নেই। ক্রেতারা এখন সবজি কেনা ও খাওয়া-দুটিই কমাতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে সবজি কিনলেই পকেট ফাঁকা হয়। অন্য পণ্য কিনবেন কেমনে। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন রক্ষায় নামমাত্র সবজি কেনার পাশাপাশি একেবারে কম কিনছেন নিত্যপণ্যও।
সবজি কিনতে আসা ভোক্তারা সিলেটের ডাককে জানান, নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম লাগামছাড়া। খুবই কষ্টে আছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। পরিবারের খরচ ৪০ শতাংশ কমিয়েও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের এই কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই।
দিরাই বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা হর রঞ্জন রায় জানান, ‘মানুষ এখন কি খেয়ে বাঁচবে। বাজারের লিস্ট পকেটে নিয়ে বের হলেও সে অনুযায়ী কিছুই কিনতে পারি না। ভোগ্যপণ্য এখন আর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। মাছ-মাংস এক দিন-দুই দিন না খেলেও চলে, কিন্তু সবজিতো প্রতিদিন দরকার। সেই সবজিও এখন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কি খেয়ে বাঁচব।
রিক্সাচালক আনোয়ার মিয়া জানান, শাক সবজি এক সময়ে ছিল গরিবের খাবার। এখন তা বিলাসিতায় রূপ নিয়েছে। সপ্তাহের সব দিনই আমাদের ডালভাত আর শুটকি ভর্তা খেয়েই চলতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মতো গরিবদের জন্যে বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে উঠেছে।
দিরাই বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. তাইদুর রহমান জানান, বিগত ১০ বছর ধরে তিনি এ বাজারে সবজি বিক্রি করেন। এই দীর্ঘ সময়ে আমি কখনও এক সঙ্গে সব ধরনের সবজির দাম এত বৃদ্ধি পেতে দেখিনি। দাম বাড়ায় ক্রেতার যেমন কষ্ট বেড়েছে তেমনই আমাদের কষ্টও বেড়েছে। কেননা একদিকে সবজির বিক্রি কমেছে, কমেছে লাভের পরিমাণও। অন্যদিকে আগে ১০ হাজার টাকার সবজি আনলে দোকান ভরে যেত, কিন্তু এখন ৪০ হাজার টাকার সবজিতেও দোকান খালি থাকছে। সবজির দাম কমলে ক্রেতার মতো আমরাও স্বস্তি পাই।
বাজারের আড়তদার জুয়েল চন্দ্র সরকার জানান, বাজারে কাঁচামালের সংকট আছে। আবহাওয়া অনুকূল না থাকাসহ নানা কারণে ফসল উৎপাদন কমেছে। তাই সবজির দামও অনেক বেশি। শীতের সবজি বাজারে পুরোপুরি না আসার আগ পর্যন্ত আপাততঃ কয়েক মাস সবজির দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। অবশ্য, শীত মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজিতে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। তখন সবজির দামও কমে আসবে।