শিক্ষক দিবসের ভাবনা ও প্রত্যাশা প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ৮:০৭:০২ অপরাহ্ন
৫ আক্টোবরকে জাতিসংঘ বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ হতে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, আই.এল. ও (ওখঙ) এবং ই.আই (ঊফঁপধঃরড়হ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ) এর যৌথ অংশিদারিত্ব ও সুপারিশমালার ভিত্তিতে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। এই বছরের (২০২৩) বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো: ‘কাক্সিক্ষত শিক্ষার জন্য শিক্ষকঃ শিক্ষক স্বল্পতা পূরণ, বৈশ্বিক অপরিহার্যতা।’ (ঞযব ঃবধপযবৎং বি হববফ ভড়ৎ ঃযব বফঁপধঃরড়হ বি ধিহঃ: ঞযব মষড়নধষ রসঢ়বৎধঃরাব ঃড় ৎবাবৎংব ঃযব ঃবধপযবৎ ংযড়ৎঃধমব.) প্রতিপাদ্যটির সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ নি¤œরুপ: কাঙ্খিত শিক্ষা মানে ঐ শিক্ষা যা মানুষের আচরণের মধ্যে পরিবর্তন আনে এবং মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে জীবনকে উন্নত ও মূল্যবান করে তোলে। কাঙ্খিত শিক্ষার মধ্যে থাকবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংকটহীনতা।
‘শিক্ষকের’ অর্থ এক – দুই বাক্যে বলা অনেক কঠিন। প্রকৃত পক্ষে শিক্ষক ঐ ব্যক্তি, যার মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, সদগুণ (ঠরৎঃঁব), শুদ্ধাচারনীতি এবং এক ধরনের বৌদ্ধিক অন্তর্দৃষ্টি থাকবে, যা শিক্ষার্থীকে প্রকৃত জীবন বোধে অনুপ্রাণিত ও প্রেষিত করবে। পাশ্চাত্য শিক্ষা-দীক্ষা বা সভ্যতার ইতিহাসে তিনজন প্রাচীন গ্রীক মণিষী ‘সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটলের’ নাম গুরু-শীষ্যের ধারাবাহিক বন্ধনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁদের জীবনাচরণ ও শিক্ষাদানে প্রকৃত শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি প্রতিভাত হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, শিক্ষক হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি তাঁর শিক্ষার্থীর কাছে একজন প্রকৃত ‘বন্ধু, দার্শনিক ও উপদেষ্টা’ (ঋৎরবহফ, চযরষড়ংড়ঢ়যবৎ ধহফ এঁরফব) হিসাবে আবির্ভুত হবেন।
শিক্ষক স্বল্পতা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এক কঠিন বাস্তবতা। শিক্ষক স্বল্পতা পুরনের জন্য যে সাধারণ আকাংখা, যা নির্দিষ্ট অঞ্চল বা দেশকে অতিক্রম করে বৈশ্বিক বাস্তবতায় অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে শিক্ষক ও শিক্ষা সম্পর্কে তাত্ত্বিকভাবে অনেক কিছু বলা সহজ। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষক ও শিক্ষার ক্ষেত্রে রয়েছে হাজারো সংকট বা সমস্যা। বিশেষ করে শিক্ষকের অধিকার, সামাজিক মর্যাদা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বেতন-কাঠামো বা সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে- নানাবিধ অপ্রত্যাশিত কারণে। আমাদের দেশের শিক্ষক সংগঠনগুলো বা শিক্ষক সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার ও যুক্তিসংগত দাবী দাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রায়ই মাঠে-ময়দানে আন্দোলন করতে বাধ্য হন, যা অত্যন্ত বেদনার বিষয়।
জাতিসংঘের সতেরটি এসডিজির (ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষং) মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ‘মানসম্মত শিক্ষা’ (ছঁধষরঃু ঊফঁপধঃরড়হ) যাকে এসডিজি-ফোর বলা হয়। আর মান-সম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য অপরিহার্য শর্ত হলো মানসম্মত শিক্ষক (ছঁধষরঃু ঞবধপযবৎ) মানসম্মত শিক্ষক তৈরী করতে না পারলে মানসম্মত শিক্ষার প্রসার বাধাগ্রস্ত হবে। মানসম্মত শিক্ষা ও মানসম্মত শিক্ষক একে অপরের সম্পূরক ও পরিপূরক।
আমরা একটি সহজ স্লোগান দেই: ‘শিক্ষা অধিকার, সুযোগ নয়’। কিন্তু যিনি শিক্ষা দান করবেন, তাঁর প্রাপ্য অধিকার, মর্যাদা ও সুযোগ থেকে তাঁকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।
শিক্ষকের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে সমাজ, রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্মোহভাবে ভাবতে হবে- এই হউক বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রত্যাশা।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ।