ফুরালো ৬২ বছরের অপেক্ষা ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশের পথে বাংলাদেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ২:২৩:৪৭ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক ঃ বাংলাদেশে পারমাণবিক মর্যাদার শুরুটা ১৯৬১ সালে। সে সময় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদী তীরবর্তী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। পরে নানা সীমাবদ্ধতায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ধীরে ধীরে প্রকল্পের কাজ এগুতে শুরু করলেও পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে তা আবারও স্থবির হয়ে পড়ে। এভাবেই নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে ছয় দশকের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। রাশিয়ার ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।
রূপপুর পারমাণবিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন কালপর্বে বারবার বাধার মুখে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দুই দশক পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে আবারও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিউক্লিয়ার অ্যাকশন প্ল্যান নেয়। এর এক যুগ পর ২০০৮ সালে নতুন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়। এরপর বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রায় ১৫ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চলতি বছরের গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাশিয়া থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান বাংলাদেশে আসে। পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে সড়কপথে এ চালান ঢাকা থেকে রূপপুরে নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের কাছে এ ইউরেনিয়ামের চালান আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সিই লিখাচেভ। এর মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরবর্তীকালে নানা কারণে বারবার তা হোঁচট খেয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে। বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে আলোর মুখ দেখে প্রকল্পটি। আর তাতে দীর্ঘ ৬২ বছরের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে এবার।
১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২০২৪ সালের মার্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটেও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সমপরিমাণ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। এ প্রকল্পের উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। তাতে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতিও পূরণ হবে অনেকাংশে।