কমিউনিটি ক্লিনিকের দূরবস্থা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৪৫:১৫ অপরাহ্ন
একসাথে হওয়া মানে শুরু; একসাথে থাকা মানে উন্নতি; দীর্ঘ সময় একসাথে চলা মানে সাফল্য। -এডওয়ার্ড এভরিট হ্যালি
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনকগুলোর দূরবস্থা নিয়ে সম্প্রতি একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকায়। এতে বলা হয়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ ক্লিনিক বন্ধ, অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। কোথাও নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই, নলকূপ অকেজো, শৌচাগার নষ্ট এবং ক্লিনিকে যাতায়াতের রাস্তা খারাপ। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিপুল সংখ্যক লোক। অবশ্য কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে-কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান আরও বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।
হাওর বেষ্টিত ভাটির জনপদ দিরাই উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৩০টি। এগুলোর অধিকাংশের অবস্থা জরাজীর্ণ। বর্ষাকালে ওইসব ক্লিনিকে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে অনেক ভবনের পলেস্তরা খসে পড়েছে। অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকেই রোগিদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। প্রকৃতঅর্থে সারাদেশেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর একই চিত্র। তাই সরকার যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে স্থাপন করেছিলো কমিউনিটি ক্লিনিক, তা ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। পাঁচ শ’৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার পর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। তখন ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রকল্পটি আবারও চালু করে। এরপর দ্রুত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠির ভরসাস্থল হয়ে উঠছিলো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোর বেহাল দশা ফুটে উঠতে শুরু করে। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন, কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও নেই ওষুধপথ্য। তদারকির অভাব, জনবলসংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে অচলাবস্থায় পড়ে যায় ক্লিনিকগুলো। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে অর্ধেকের মতো ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে নতুন নকশা ও পরিসরের কারণে প্রতিটির খরচ লাগছে ৩৪ থেকে ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম ধাপে ৭০০ ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।
প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। মূলত মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও টিকাদান কর্মসূচির মতো সেবাগুলো দেয়াই এইসব ক্লিনিকেন উদ্দেশ্য। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। অথচ এসব ক্লিনিকের পেছনে ব্যয় হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। উল্লিখিত দিরাই উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোসহ অন্যান্য অঞ্চলের সকল ক্লিনিকে যাতে মানুষ কাংখিত সেবা পায়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।