ভবিষ্যতে ভিসামুক্ত বাংলাদেশ ভারত চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ৫:১১:৩৪ অপরাহ্ন
নিজেদের কল্যাণে দু’দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে ॥ স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী
চারদিনব্যাপী সংলাপ উদ্বোধন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভবিষ্যতে ভিসামুক্ত বাংলাদেশ-ভারত চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চারদিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত সংলাপ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সংলগ্ন গ্র্যান্ড সিলেট হোটেলে এ সংলাপ শুরু হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বছরে ২৮ লাখের মতো বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য ভারতে গমন করে। পাশাপাশি ৫ লাখের মতো ভারতীয় বাংলাদেশে অবস্থান করে। ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশিদের জন্য প্রতিদিন কয়েক হাজার ভিসা ইস্যু করে। এরপরও বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা কাটছে না। এজন্য ভবিষ্যতে ভিসামুক্ত ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সংলাপের মূল লক্ষ্যই হলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দু’দেশের অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান করা। বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে যেমন ভারতের সম্পর্ক; তেমনি ভারতের উন্নয়নের সাথেও বাংলাদেশের সম্পর্ক জড়িত। দু’দেশই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। বর্তমানে দু’দেশের সীমান্ত সমস্যা অনেক কমে গেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুদেশের বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি ভবিষ্যতে আরো কমবে।
এর আগে সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ বর্তমানে সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় অতিক্রম করছে। উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দু’দেশের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায়। দু’দেশের মধ্যে সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগের কানেকটিভিটি বৃদ্ধির তাগিদ দেন মন্ত্রী।
১১তম বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ সংলাপের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, দুদেশের বন্ধুত্ব অনেক গভীরে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গতিশীল নেতৃত্বে দিনে দিনে এ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হচ্ছে। নেভারহুড ডিপ্লোমেসি (প্রতিবেশী কূটনীতি) বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি হচ্ছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ভারত- বাংলাদেশ সম্পর্কও এর বাইরে নয়। দুদেশের মধ্যে অভূতপূর্ব সম্পর্ক বিদ্যমান উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, নিজেদের কল্যাণে দুদেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। গঙ্গা পানি চুক্তি সম্পন্ন হলেও তিস্তা এখনো ঝুলে রয়েছে-সেটিও বাস্তবায়নে দুদেশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষে-মানুষে সম্পর্ক বাড়ানোর তাগিদ স্পিকারের। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সংসদীয় কূটনীতি জনপ্রিয় হচ্ছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ভারত-বাংলাদেশের পার্লামেন্টকেও এভাবেই কাজ করতে হবে। কারণ দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে দুদেশের সংসদের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর দরকার। দুদেশের নারী সংসদ সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং নেভারহুড মডেলের কূটনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মুনতাসির মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ভারতের সাবেক মন্ত্রী শ্রী এম জে আকবর, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার মি. প্রণয় ভার্মা ও ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাশ গুপ্ত। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদূঢ় করতে এবং উভয় দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ব্যবসা উন্নয়নের স্বার্থে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এই সংলাপ শুরু হয়েছে। সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে ৬ জন মন্ত্রী, ২০ জন সংসদ সদস্যসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়েছেন। সংলাপ উপলক্ষে ভারত থেকে ১৪০ জনের প্রতিনিধি দল সিলেটে এসেছে।
আজ ৬ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। এতে সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। ৭ অক্টোবর সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি এবং সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। পরে ৮ অক্টোবর সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখবেন দুদেশের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।