রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ৫:১৭:২৯ অপরাহ্ন
পরমানু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করবে বাংলাদেশ : শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরীক্ষিত বন্ধু, গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার : ভøাদিমির পুতিন
ডাক ডেস্ক : রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের চালান আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে ৩৩তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তির যুগে প্রবেশ করল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি।
ইউরেনিয়াম হস্তান্তর উপলক্ষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুই দেশের নেতার অনুমতিতে সেখানে পারমাণবিক জ্বালানির একটি নমুনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাতে হস্তান্তর করেন রুশ পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। অনুষ্ঠানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইএইএর ডিজি রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি, রোসাটমের ডিজি আলেক্সি লিখাচেভ। সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করছি। আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের প্রেসিডেন্ট, রাশান ফেডারেশনসহ অন্যরা এখানে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন। আমাদের সবাইকে সম্মানিত করেছেন।
তিনি বলেন, অচিরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। বাংলাদেশ এ পরমানু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যে কোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এ প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া ব্যবহƒত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে। আজকের বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আজ সফল পরিণতি লাভ করছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধু প্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি। যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এই স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র ৯ মাসেই একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ‘গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব’ শিরোনামে সেই সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে যুক্ত করেছিলেন ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন’ সে লক্ষ্যে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন; সমুদ্র সম্পদ এমনকি খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ করেছিলেন এবং বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘বাংলাদেশকে পরীক্ষিত বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই বন্ধুত্বের ভিত্তি হচ্ছে সমতা ও সম্মান।
পুতিন আরও বলেন, ভবিষ্যতেও এই কেন্দ্রের সঙ্গে থাকবে তার দেশ। ২০২৪ এ প্রথম ইউনিট ও ২০২৬ সালে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দেন তিনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে না। প্রকল্পের পুরো সময়কাল সব ধরনের কারিগরি সহযোগিত করে যাবে। এই প্রকল্প বাংলাদেশের বর্ধনশীল অর্থনীতির চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে। ভারতও এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহোযোগিতা করছে। বাংলাদেশ রাশিয়ার পরীক্ষিত বন্ধু।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে কয়েকটি দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল তার মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম। গত বছর বঙ্গবন্ধুর মস্কো সফর সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়। রূপপুর প্রকল্পে সরাসরি ২০ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অনেক কোম্পানি এই প্রকল্পে কাজ করছে। যেটাও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করবে। ২০২৬ সালে পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে। ফলে দেশের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে।
পুতিন বলেন, রাশিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে। অবশ্যই কার্বন নিঃসরণ কম হবে।
আমরা যৌথভাবে কাজ করছি, এ প্রকল্পে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে আমাদের ভারতীয় বন্ধুগণ সহযোগিতা করেছে। তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সমর্থন করবো, পাশে থাকবো, কারিগরি সহযোগিতা দেবো।
উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জ্বালানির প্রথম চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। পরেরদিন বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় সেই জ্বালানি নেওয়া হয় প্রকল্প এলাকায়। তাছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রকল্পের দ্বিতীয় চালান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছেছে।