ব্যতিক্রমী শিক্ষক ফজলু মিয়া এখন ফেরিওয়ালা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ৫:২০:০৩ অপরাহ্ন
হোসাইন আহমদ, মৌলভীবাজার থেকে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক না হয়েও প্রাথমিক পর্যায়ে ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের পড়ানো ছিল তার নেশা। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে পড়াতেন। বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিদিন নিতেন দুই টাকা। আবার কেউ টাকা দিতে না পারলেও চাপ প্রয়োগ করতেন না। ফলে এলাকার সবার কাছে তিনি ‘দুই টাকার শিক্ষক’ হিসাবে সমধিক পরিচিতি লাভ করেন। ব্যতিক্রমী এ শিক্ষকের নাম ফজলু মিয়া।
বর্তমানে বয়সের ভারে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারছেন না। অভাবের সংসারে পড়ছে টানাপোড়েন। জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী বিক্রি করছেন। শিক্ষার প্রতি তার দরদ রয়েছে।
জানা যায়, ফজলু মিয়া মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার সারমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু জটিল রোগের কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এরপর থেকেই তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করেন। ফজলু মিয়ার এক ছেলে। ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। মারা গেছেন স্ত্রীও। নিজে রান্না করে খান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জুনেদ মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি ফজলু মিয়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। বিশেষ করে তার এই মহতি উদ্যোগে উপকৃত হয়েছেন সমাজের পিছিয়ে থাকা পরিবারের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ফজলু মিয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ফজলু মিয়ার ছাত্র ও পাঁচগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: মনসুর আলী বলেন, ‘আমরা যখন পড়েছি তখন কে টাকা দিল আর কে দিল না সেটা তিনি দেখতেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে একত্রিত করে পড়াতেন। স্যারের কল্যাণে আমরা অনেকে পড়ালেখা করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে বয়সের ভারে স্যার পড়াতে পারেন না। লেখাপড়ার প্রতি দরদ থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষাসামগ্রী বিক্রি করে কোনো রকম চলেন। তিনি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক।’
জাকারিয়া নামের অপর শিক্ষার্থী বলেন, স্যারের কাছে আমরা যখন পড়তাম তখন অন্যান্য শিক্ষকরা মাসিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নিতেন। কিন্তু ফজলু স্যার নিতেন মাসে ৬০ টাকা। আবার কেউ কেউ টাকা না দিতে পারলেও পড়ানো বাদ দিতেন না। বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজি তিনি খুব ভালো করে পড়াতে পারতেন।