ওসমানী মেডিকেলে হাঁটু পানি, বিঘনিত সেবা কার্যক্রম নিম্ন এলাকার ঘরবাড়িতে পানি, নষ্ট হয়ে গেছে আসবাবপত্র
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৩৫:০১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: টানা ভারি বর্ষণে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে। ফলে বন্ধ হয় যায় হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বিঘœ ঘটে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে। মেডিকেল কলেজের নিচতলার যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ হয়নি। অন্যদিকে শুধু হাসপাতাল নয়, সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও রেলস্টেশনের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জলাবদ্ধতার পানিতে নিমজ্জিত হয়। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি করে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩৫৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর শনিবার সকাল ৬ থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরপর বৃষ্টির প্রবণতা কমতে থাকে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪.২ মিলিমিটার এবং ১২ টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ১.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৫০.৮ মিলিমিটার।
এদিকে, শনিবার ভোর থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে কলেজ ভবনের নিচতলার প্রায় প্রতিটি কক্ষে হাঁটুসমান পানি জমে।
সরেজমিনে ওসমানী মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার আবাসিক ভবনের বাসা-বাড়িতে পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন কক্ষে পানি প্রবেশ করার ফলে অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে। তবে কী পরিমাণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্টদের দাবি ওসমানী মেডিকেল কলেজের উত্তরপাশ ঘেঁষে প্রবাহিত ছড়ার আশ-পাশে বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। এ কারণে ছড়া দিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকার অনেক বাসিন্দা পানির প্রবাহ ওসমানী মেডিকেলের একমাত্র ড্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। ফলে ড্রেন উপচে বৃষ্টির পানি হাসপাতালসহ অন্যান্য এলাকায় প্রবেশ করছে। হাসপাতাল ছাড়াও পাশাপাশি পশ্চিম পার্শ্বের বাগবাড়ী, বর্ণমালা পয়েন্ট সংলগ্ন নিচু এলাকাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি প্রবেশ করে মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। তবে বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে এবং বেলা বাড়ার সাথে পানি নেমে যায়।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। গত বছর বন্যার সময়ও পানি ঢুকে। এছাড়া চলতি বছরের জুলাই মাসেও হাসপাতালে পানি প্রবেশ করে। সংশ্লিষ্টদের বারবার জানানো হলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে পানি প্রবেশ করার ফলে আমাদের চিকিৎসকদের আসতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তবুও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। জেনারেটর দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালু রাখা হয়। পানি ধীরে ধীরে নামছে। পানিতে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে-এটা পরে বলতে হবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, নগরীর নি¤œাঞ্চলসহ বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতেও ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বাসিন্দাদের আতঙ্কের মধ্যে রাত যাপন করতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর উপশহর, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, কাজলশাহ, শেখঘাট, বনকলাপাড়া, কালীঘাট, দরগাহমহল্লা, পীরমহল্লা, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, লাকড়ীপাড়া, ঝেরঝেরিপাড়া, আদিত্যপাড়া, কেওয়াপাড়া, পায়রা, দরগাগেট, চৌহাট্টা, মেজরটিলা প্যারাগন আবাসিক এলাকা, বাদামবাগিচা, শাহপরাণ, কুয়ারপার, সোবহানীঘাট, যতরপুর, দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুরসহ সিলেট নগরের অর্ধেকেরও বেশি এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি বাসা বাড়ি থেকে নেমে গেছে। সকাল ১০টা থেকে বৃষ্টিপাত থেমে যায়। এসব জায়গায় গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছে।
গতকাল শনিবার সকালে নিজ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তাঁর নিজের বাসাও জলমগ্ন ছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, ফরহাদ চৌধুরীর বাসার নিচ তলায় পানি থৈ থৈ করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে পানিতে। নিজ পরিবার এবং এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন তিনি লাইভে।
লাইভে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও আমাদেরকে ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।
দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলী বলেন- শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বাসায় পানি ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন আসবাবপত্র বাঁচাতে এগুলো খাটের উপর রেখেছি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। আর পানি বাড়লে বাসা ছেড়ে যেতে হতো। আমাদের এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের অবস্থাই এমন বলে জানান তিনি।
মেজরটিলা প্যারাগন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক ফারুক আহমদ বলেন, টানা বৃষ্টি চলায় এখন নগরীর অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায়ও যেসব এলাকায় পানি ওঠেনি, এমন উঁচু এলাকায়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এলাকাটি এরকমই একটি। এখানে অনেক বাসাবাড়িতে পানি ওঠার পাশাপাশি রাস্তাও ডুবেছে বলে জানান তিনি।
তালতলা এলাকার বাসিন্দা সানাওর রহমান চৌধুরী বলেন- রাত ৩টার দিকে আমার ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ঘরের আসবাবপত্রসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর যেভাবে টানা বৃষ্টি হয়েছে আরো দিলে পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো বলা মুশকিল।
এদিকে, নগরীর আশপাশ এলাকায়ও ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কুমারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মলয় দে জানান, বৃষ্টির পানি ছড়া শিয়ালী ছড়া দিয়ে প্রবাহিত হতে গিয়ে কুমারপাড়া গ্রামের রাস্তা ভেঙে দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হাঁটারও উপযোগিতা হারিয়েছে। তিনি বলেন, একজন রোগী নিয়ে সাহেববাজারে পৌঁছাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে। তিনি আরো জানান, কিছু দিন আগে একটি কালভার্ট তৈরি করা হলেও পানির ¯্রােতে কালভার্টটি হেলে পড়েছে। দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নালা-নর্দমার উন্নয়নকাজ চলছে। এরমধ্যে অতিবৃষ্টি হয়েছে। নি¤œাঞ্চলে এখনো পানি রয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই এই মুহূর্তে। পানি নামতে শুরু করলে কোথাও বাধাগ্রস্ত হলে আমরা পরিষ্কার করে দিবো।
সিলেট রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো: নুরুল ইসলাম বলেন, সকালে বৃষ্টিপাতে স্টেশনের বাইরে পানি জমেছিলো। তবে যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তবে কোন বিঘœ ঘটেনি।