মাছের দেশে মাছ নেই!
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ৬:১০:৩৮ অপরাহ্ন
সব ধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা আর বাধা সত্ত্বেও নিজের সবটুকু দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টাই শক্তিমান মানুষকে দুর্বলদের থেকে আলাদা করে। – থমাস কার্লাইল।
মাছ নেই মাছের দেশে। ভাটির জনপদ হচ্ছে মিঠাপানির মাছের প্রধান উৎপাদনস্থল। আর প্রায় সারা বছরই বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করা হয়ে থাকে এই অঞ্চলে। কিন্তু এবার মাছের ভরা মওসুমেও মাছ নেই মাছের রাজ্যে। আর হাওর ও নদ-নদীতে মাছ না থাকায় জেলেরা বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছে। মূলত কৃষিজমিতে কীটনাশক প্রয়োগ ও অবাধে পোনামাছ নিধনসহ নানা কারণে নদী-হাওর-বিলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জজহ ভাটির জনপদের অসংখ্য হাওর ও বিল দেশীয় মাছের ভা-ার হিসেবে পরিচিত। এসব হাওরের মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হতো। তবে কালের বিবর্তনে বদলে গেছে সেই চিত্র।হাওর বিলে এখন মাছ নেই আগের মতো। দেশের উত্তর-পূর্বাংশে সাতটি জেলার ৪৭টি উপজেলা নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৯৫, সিলেটে ১০৫, হবিগঞ্জে ১৪, মৌলভীবাজারে ৩, নেত্রকোণায় ৫২, কিশোরগঞ্জে ৯৭ এবং ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলায় ৭টি মিলে মোট ৩৭৩ টি হাওর রয়েছে।যার আয়তন সাড়ে আট হাজার বর্গ কিলোমিটার।এই হাওরাঞ্চলে তিন হাজারের বেশি জলমহাল রয়েছে। এই হাওর অঞ্চলের আয়তন ৮, ৬৯, ০০০ হেক্টর। হাওরাঞ্চল হতে বছরে প্রায় ৪.৩২ লাখ টন মাছ আহরণ করা হয়। যা দেশের আভ্যন্তরীণ জলাশয় হতে আহরিত মাছের ২০ শতাংশ। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আমাদের দেশে ২৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। আশার কথা হচ্ছে,মিঠাপানির এসব সুস্বাদু মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা পরিচালনা করে এ যাবত ২৪টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া,বিভিন্ন হাওর বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তি ও ৪২৬টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও বিপন্ন প্রজাতির মাছ সুরক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে। বর্তমানে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে – প্রজননের সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া, নদী খাল ও বিলে বর্জ্য ফেলে পানি দূষণ, মাছের আবাসস্থল ধংস হওয়া, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে পোনাসহ মাছের বংশ নির্মূল করা।সেইসঙ্গে রয়েছে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার। কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় ধংস হচ্ছে মৎস্যসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি।
স্মরণ করা যেতে পারে, জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করে মৎস্য চাষকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার শুভ সূচনা করেছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মৎস্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দেশে মাছের উৎপাদন বাড়তে থাকে। ইতোপূর্বে দেশ মৎস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে; মাছের উৎপাদন সরাসরি পরিসংখ্যানে বাড়লেও দিন দিন তা মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে,দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য দরকার জোর তৎপরতা।