বিশ্ব ডাক দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ২:৪০:১৪ অপরাহ্ন
জীবনই হলো এমন একটা শক্তি, যা সর্বদা আপনাকে পরিবর্তন করতে শেখায়।-স্টিফেন হকিং।
প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে ডাক বিভাগ। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির প্রতিযোগিতায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পেরে উঠছে না ঐতিহ্যবাহি এই প্রতিষ্ঠানটি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবার মান বাড়াতে পারছে না তারা। অর্থাৎ ডাক বিভাগের সেবাগুলোর বেশিরভাগই রয়ে গেছে এনালগ পদ্ধতির। ইতোপূর্বে ডাক বিভাগের সেবার ধরণ পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ করে, ই-কমার্স পণ্য ডেলিভারির জন্য নতুন সেবাসহ আরও কিছু সেবা আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয় বছর কয়েক আগে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। তাই ডাক বিভাগ চলছে কোনমতে। বলা যায় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করছে।এই প্রেক্ষাপটে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাক দিবস।
ডাক বিভাগের ইতিহাস পুরনো। পায়রার পায়ে বেঁধে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে শুরু হয় বার্তা আদান প্রদান। মূলত ১২০৬ সাল থেকে ১২১০ সাল পর্যন্ত দিল্লির প্রথম সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবেক এর শাসনামলে ডাক ব্যবস্থার ক্রমোন্নতি শুরু হয়। তিনি দিল্লি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত আরবদের অনুকরণে এক ধরণের ডাক ব্যবস্থা চালু করেন। সেটি ‘ঘোড়ায় ডাক’ নামেই প্রচলিত ছিলো। এর সংস্কার সাধন করেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি ১২৯৬ সালে। পরবর্তীতে মুহাম্মদ বিন তুগলক এবং শেরশাহর আমলে ডাক ব্যবস্থার সংস্কার সাধন হয়। ১৬১০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির ডাক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বরার্ট ক্লাইভ ডাক ব্যবস্থার সংস্কার করেন ১৭৬৬ সালে। এরপর দীর্ঘ সময় নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ডাক বিভাগ বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ডাক সার্ভিস চালু হয় ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে ডাকঘর-ডাকবাক্স। এখন থেকে ১০/১২ বছর আগেও মোটামুটি ডাকঘরগুলো সচল ছিলো। চিঠিপত্র, পার্সেল আদান প্রদান হতো কমবেশি। কিন্তু এখন প্রায় অচল ডাকঘরগুলো। বিশেষ করে গ্রামীণ ডাকঘরগুলো বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম। লাল বর্ণের ডাকবাক্সগুলো হারিয়ে গেছে। কাঁধে খাকি রংয়ের বস্তা নিয়ে গ্রামিণ পথে ডাক হরকরা ছুটে চলার দৃশ্য এখন চোখে পড়ে না। পিয়নরা চিঠিপত্র-মনিঅর্ডার নিয়ে আর বাড়ি বাড়ি যায় না। বলতে গেলে দেশের নয় হাজার আটশ’ ৮৬টি ডাকঘর এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ডাকঘর তার পুরনো চেহারায় ফিরে আসুক। এর জন্য ডাকঘরের কর্মপরিধি বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে সেবার মান। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যে টিকে থাকতে হলে ডাক বিভাগকে আমূল পরিবর্তন করতে হবে। ই-মেইল, কুরিয়ার সার্ভিসসহ আরও অনেক সেবা রয়েছে; বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত যে সেবাগুলো ডাক-সেবাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কীভাবে দেড়শ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, সেইপন্থা বের করাই হোক আজকের বিশ্ব ডাক দিবসের অঙ্গীকার।