৫০ বছর থেকে বাবুই পাখির বাস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ৪:০৬:৩৩ অপরাহ্ন
রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে আব্দুল আজিজ : ‘উঠান, বাড়ি, রাস্তা বা জমিতে ছড়িয়ে পড়ে ছোট বাবুই পাখি। খড়কুড়ো মুখে নিয়ে উড়ে যায় গাছে। এভাবে একটি একটি করে খড়কুড়ো নিয়ে নিপুন দক্ষতায় তৈরি হয় বাসা। নারিকেল, সুপারি ও তালগাছের পাতার সাথে ঝুলতে থাকা বাসা ঝড়-বাদলেও থাকে দিব্যি। কবি রজনীকান্ত সেন এর বিখ্যাত ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় অট্টালিকার ফাঁকফোকরে বসবাস করা চড়ুই এর দম্ভোক্তির জবাবে বাবুই পাখির উক্তি ‘পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা / নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।’
বাবুই পাখির বাসা বুনার এমন সুন্দর দৃশ্য গ্রামবাংলায় এখন দেখা না গেলেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ছয়কোট গ্রামের আব্দুল বাছিতের বাড়ির আশপাশে এখনো সুপারি গাছে পাওয়া যায় বাবুই পাখির বাসা। ৫০ বছর থেকে বাবুই পাখি বাসা করে আছে বলে বলে জানান আব্দুল বাছিত। ৭০ বছর বয়সি আব্দুল বাছিত বলেন ‘আমাদের বাড়ির আশে পাশে এখনো সুপারি গাছের পাতায় বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়। ছোট থাকতে থেকে এভাবে দেখে আসছি। একসময় এদের কিচির মিচির ডাকে এলাকা মুখরিত ছিল। তবে আগের মত দেখা যায়না বাবুই পাখির আনাগোনা।
পাখি প্রেমি ও পরিবেশকর্মী মৌলভীবাজারের রাজন আহমদ বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ বাবুই পাখি সংরক্ষণ করে এদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল তৈরীর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
কমলগঞ্জ উপজেলার ছয়কুট গ্রামের বাসিন্দা অভয়চরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মানুষ গ্রাম এলাকার প্রাকৃতিক ঝোপঝাড় আবাদ করেছে। প্রকৃতিবান্ধব গাছ না লাগিয়ে রুক্ষ শুষ্ক বিদেশী প্রজাতির গাছ লাগানোর কারণে আমাদের মনোরম প্রকৃতির অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে।
পাখি বিশেষজ্ঞ শ্যামল কিরণ মিত্র বলেন, ছোট বাবুই পাখির বাসা তৈরীর শৈল্পিকতা অসাধারণ। প্রকৃতিতে এই জাতের পাখিকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই প্রয়োজন। তিনি বলেন. এমন একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলে প্রচুর তাল, সুপারি ও নারিকেল গাছ দেখা যেতো। এখন বসতি স্থাপনের জন্য জলাশয়, কৃষিজমি ভরাট করে গাছপালা বন উজাড় করা হচ্ছে। এতে আর আগের মতো গ্রামাঞ্চলের রাস্তার ধারে তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছের দেখা মিলে না। মিলে না শৈল্পিক বাবুই পাখিরও। গ্রামের একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সাথেই হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। সবাইকে পশুপাখির আবাসস্থল রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করি। কোথাও আবাসস্থল সংকট দেখলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।