হামাসের হামলায় ৭ শতাধিক ইসরাইলি নিহত পাল্টা হামলায় মারা গেছেন ৪ শ’রও বেশি ফিলিস্তিনি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ৪:২৪:৫৩ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : ইসরাইলের ভেতরে ঢুকে হামলা চালানো গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরাইলের আরো নতুন স্থানে পৌঁছে গেছে। তাদের হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। ইসরাইলি মিডিয়ার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় আরও ২ হাজার ১৫৬ জন ইসরাইলি নাগরিক আহত হয়েছেন। অপহরণ করা হয়েছে অন্তত ১০০ ইসরাইলিকে। হামাসের হামলায় নিহতদের মধ্যে ৪৪ জন সেনা সদস্যের পরিচয় প্রকাশ করেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, গাজায় ইসরাইয়েলের পাল্টা হামলায় অন্তত ৪ শ’রও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গতকাল রোববার সকালের দিকে হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ শুরু করার আগে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছিল ইসরাইলের সেনাবাহিনী। ইসরাইলের পক্ষ থেকে হামলার সতর্কতা আসার পর গাজার নাগরিকদের অনেকে এরই মধ্যে তাদের ঘর ছেড়ে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সর্বশেষ ভিডিও বার্তায় বলেছেন যে তাদের ‘শত্রুকে এর চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে, যা তাদের আগে কখনও দিতে হয়নি।’
এদিকে, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনার পক্ষে বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন। এই ঘটনায় ইসরাইলি মন্ত্রিসভা যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে।
ইসরাইল-গাজা বেড়া থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে দক্ষিণ ইসরাইল থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দক্ষিণ ইসরাইলের অনেক শহর ও গ্রাম থেকে সেখানে অবস্থান নেয়া হামাস যোদ্ধাদের প্রতিহত করতে পারছে না ইসরাইলি বাহিনী।
তিনি জানান, আমরা জানতে পেরেছি যে, হামাস যোদ্ধারা নতুন করে যুদ্ধাস্ত্রের সরবরাহ পেয়েছে। তারা নতুন স্থান কিবুৎজ মাগেনেও পৌঁছে গেছে।
তিনি আরো জানান, আমরা ৬৫৯ ইসরাইলি নিহতের তথ্য পেয়েছি। পরিস্থিতি ইসরাইলিদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এদিকে, ইসরাইলের বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর দিয়েছে যে, সেখানে ঢুকে যাওয়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সাথে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ট্যাংকসহ যুদ্ধ করছে। এর আগে শনিবার হঠাৎ করেই বেড়া ভেঙ্গে ইসরাইলে ঢুকে পড়ে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা।
গাজায় ৪২৬ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল
গাজায় বেসামরিক বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর তীব্র হামলার মধ্যেই ইসরাইলের ভেতরে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গাজায় ইসরাইলের হামলা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অব্যাহত বিমান হামলায় গাজা যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে গাজার প্রধান সড়ক।
গাজায় গতকাল রোববার সকালেও আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল।
ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি গতকাল রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, হামাসের ব্যবহৃত ১০টি টাওয়ারসহ ইসরাইলের বাহিনী ৪২৬টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
গাজা শহরের কেন্দ্রস্থলে আল ওয়াতান ভবন ও আল আকলক ভবনে হামলা হয়েছে বলে গাজার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন। অঞ্চলটিতে বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগও আংশিক বিচ্ছিন্ন।
ইসরাইলি শহরগুলোতে অবস্থান নেওয়া হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনী এখন সম্মুখ লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। এ লড়াইয়ে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। চারশরও বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে আটক করার দাবিও করেছে ইসরাইল। এছাড়া ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে হামাসের কিছু সদস্যকেও হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় দক্ষিণে রাফাহ থেকে উত্তরে বেইট হানুন (ইসরাইলিদের কাছে এরেজ নামে পরিচিত) এলাকা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি শহরে বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বহু মানুষ।
ইসরাইলের ব্রিগেড কমান্ডার নিহত
ইসরাইলের নাহাল পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল জোনাথন স্টেইনবার্গ হামাস সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন। গত শনিবার গাজা উপত্যকার সীমান্তবর্তী কেরেম শালোম এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শোমরিয়া থেকে ৪২ বছর বয়সী স্টেইনবার্গ তার অধীনস্থদের পরিচালিত সংঘর্ষের জায়গায় যাচ্ছিলেন। এ সময় হামাস সদস্যদের মুখোমুখি হন এবং তাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন।
হামাস শনিবার সকালে ইসরাইলের ওপর নজিরবিহীন আক্রমণ শুরু করে। এ সময় হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করা হয়। এ হামলায় শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫০ জন নিহত এবং ১৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়।
গাজা উপত্যকায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক হামলায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ হাজার ৬৯৭ জন আহত হয়েছে।
সশস্ত্র সংঘাতের নিন্দা ও অস্ত্রবিরতির আহ্বান বাংলাদেশের
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আমরা ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়কে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের জন্য এবং দু’পক্ষেই আরও নিরীহ প্রাণহানি এড়াতে অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, ইসরাইলি দখলদারিত্বের অধীনে বসবাস এবং ফিলিস্তিনি ভূখ-ে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এ অঞ্চলে শান্তির পথ প্রশস্ত করবে না। কার্যকর সমাধান হিসেবে বাংলাদেশ একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ধারণা, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের স্বাধীন ও দখলমুক্ত সহাবস্থান সমর্থন করে।
বিবৃতিতে জোর দিয়ে আরও উল্লেখ করা হয়, কেবল সংলাপ এবং কূটনীতির মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একটি স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এ লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।