সিলেটে শারদীয় দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি
এবার সিলেট জেলায় ৬১৭টি মন্ডপে পূজার আয়োজন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৩০:৩২ অপরাহ্ন
সুনীল সিংহ :
আর ক’দিন পরই শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। কারিগররা ব্যস্ত মূর্তি সাজাতে। আর পূজা কমিটিগুলো ব্যস্ত পূজার স্থান নির্ধারণসহ আনুষাঙ্গিক কাজে। অনেকেই মূর্তি বানানোর জন্য দেশের নামকরা প্রতিমা নির্মাতা শিল্পীদের সাথে চুক্তি করে কাজ করছেন। প্রতিমা নির্মাতা শিল্পীরা বাঁশ খড়ের কাজ শেষ করে মাটির কাজ করছেন। কেউবা মূর্তির উপর রং তুলির কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শরৎকালে এই পূজা হয় বলে একে শারদীয় দুর্গোৎসব বলা হয়। এবার শ্রাবণ মাস মল (একই মাসে দুটি অমাবস্যা হলে মল মাস হয়। মল মাসে কোন পূজাপার্বণ হয় না) মাস থাকায় কিছুটা দেরীতে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দুর্গোৎসবকে ঘিরে সিলেটের সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আর ক’দিন পরেই পূজার জন্য প্রতিমা মন্দিরে স্থাপন করতে হবে। শিল্পীদের রঙিন তুলির আঁচড়ে প্রতিমাগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠবে। মহানগরীর পাশাপাশি মফস্বল এলাকায়ও পূজা কমিটিগুলো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টায় কাজ করছেন দিনরাত। প্রতিমা শিল্পীদের কাজ আর পূজা কমিটির ব্যস্ততা ঘোষণা করছে অত্যাসন্ন দুর্গোৎসবের।
পূজোর যাবতীয় উপকরণ, পূজো, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, চ-ীপাঠ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতী, ভজন কীর্ত্তন, আলোকসজ্জা ও ডেকোরেশনসহ নানান প্রস্তুতি চলছে। পূজা আয়োজনকারী প্রতিটি কমিটি ও পারিবারিক পূজা উদ্যোক্তারা এখন নান্দনিক সুন্দর আয়োজনের জন্য বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শারদ উৎসব উপলক্ষে নগীর বিপণীবিতানগুলোতে সকাল থেকে মার্কেট ও শপিং মল বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সনাতন ধর্মের লোকজন নতুন পোশাক ক্রয় করতে এ মার্কেট ও মার্কেট ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সর্বত্রই এক সাজ সাজ রব পড়েছে।
এবার সিলেট মহানগর ও জেলায় ৬১৭টি ম-পে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে সার্বজনীন ৫৬৯টি, পারিবারিক ৪৮টি পূজোর আয়োজন হবে।
মহানগরীতে ১৫১টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ১৩৪টি ও পারিবারিক ১৭টি। জেলায় ৪৬৬টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ৪৩৫টি ও পারিবারিক ৩১টি।
জানা গেছে, মহানগরীর ৬টি থানা এলাকায় এবার মোট ১৫১টি পূজামন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানা এলাকায় ৩৯টি, জালালাবাদ থানা এলাকায় ১৮টি, এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ৩৮টি, শাহপরান থানা এলাকায় ২৩টি, দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায় ১৫টি ও মোগলাবাজার থানা এলাকায় ১৮টি।
অন্যদিকে, জেলায় মোট ৪৬৬টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সার্বজনীন ৪৩৫টি ও পারিবারিক ৩১টি। জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৬৬টি, বালাগঞ্জে ৩২টি, কানাইঘাটে ৩১টি, জৈন্তাপুরে ২৩টি, বিশ্বনাথে ২৫টি, গোয়াইনঘাটে ৩৯টি, জকিগঞ্জে পূজা ৯৮টি, বিয়ানীবাজারে ৫০টি, কোম্পানীগঞ্জে ২৮টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৪০টি এবং ওসমানীনগর উপজেলায় ৩৪টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। এবার শ্রাবণ মাস মল মাস থাকায় কিছুটা দেরীতে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনা অমাবস্যার নাম মহালয়া। এর আগের পূর্ণিমা তিথি থেকে পিতৃপক্ষের সূচনা থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। মহালয়ার দিন তর্পণ নিবেদন সম্পন্ন হয়।
আগামী ১৪ অক্টোবর পবিত্র মহালয়া। আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী ও ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী ।
পূজোর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা জানান, সিলেট বিভাগে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবার পূজোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, প্রতিটি পূজাম-পে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, জেনারেটর রাখা ও পরিদর্শন বই রাখার জন্য সকলকে অনুরাধ করেছি।
তিনি আরো বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এজন্য সকলে মিলে এ শারদীয় উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান তিনি।