মানসিক স্বাস্থ্য দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ২:৪৮:০৩ অপরাহ্ন
মানুষের সুখ আর পরিশ্রম তার জীবন গড়ে তোলে।
-লিও টলস্টয়।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের ১০ তারিখ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় দিবসটি। মানসিক রোগ একটি ‘ঘাতক ব্যাধি’। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতন ব্যক্তিরাই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। আর এই রোগে আক্রান্তরা তিলে তিলে নিজেকে নিঃশেষ করে ফেলে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে নীরবে নিভৃতে। এক পর্যায়ে এরা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। সাম্প্রতিককালে নানা কারণে আমাদের দেশে মানুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। যেকোন ধরনের সংকটে- দুর্ভোগে ভেঙে না পড়ে মনোবল দৃঢ় করার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে; সমস্যার সমাধান আত্মহত্যা নয়। মূলত এই ধরনের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতেই পালিত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।
মানসিক সুস্থতা মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। মানসিক সমস্যা যেকোন মানুষের যেকোন সময়ে হতে পারে। যেকোন ধরনের মানসিক সমস্যাই কাবু করতে পারে মানুষকে। তাই সমস্যাকে উপেক্ষা না করে দ্রুত মেনে নিয়ে প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে হবে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে আমাদের সমাজে মানসিক সমস্যাকে গোপন করার প্রবণতা রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মানসিক স্বাস্থ্য বলতে আবেগিয় মনস্তাত্বিক এবং সামাজিকভাবে ভালো থাকাকে বোঝায়। এটা শুধু অসুস্থতার অনুপস্থিতি নয়, পরিপূর্ণ ভালো থাকাকে বোঝায়। মানসিক স্বাস্থ্যই আমাদের চিন্তা, মন ও কাজে প্রভাব ফেলে। আমরা কীভাবে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করবো, তা মানসিক স্বাস্থ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক অবস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়। মানসিক স্বাস্থের অবনতির উপসর্গগুলো প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞগণ মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির বিভিন্ন লক্ষণ তুলে ধরে এ ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। লক্ষণগুলো হচ্ছে- খাওয়া বা ঘুম বেশি কমে যাওয়া বা বেশি বেড়ে যাওয়া, নিজের কাজ বা প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা, দুর্বল মনে হওয়া বা সব কিছুকেই মূল্যহীন ভাবা, নিরাশ থাকা বা অসহায় ভাবা, অতিরিক্ত ধূমপান মদ্যপান বা মাদক নেয়া, অযথাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়া, বারবার ভুলে যাওয়া, খিটখিটে ভাব, মন খারাপ, ঘন ঘন অনুভূতির পরিবর্তন হওয়ার কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্কে খারাপ প্রভাব পড়া, বারবার একই চিন্তা বা ঘটনা মনে পড়া, বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন শব্দ শোনা বা ঘটনা বিশ্বাস করা, নিজের ক্ষতি করা বা অন্যের ক্ষতি করা ইত্যাদি। উল্লিখিত কারণ ও লক্ষণ যে কারও মধ্যে ধরা পড়লে তাকে মানসিক রোগি বলেই মনে করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রতি চারজনের একজন জীবনের কোন না কোন সময়ে মানসিক সমস্যায় পড়েন। আর আমাদের দেশে শতকরা ১৬ জনই কোন না কোনভাবে মানসিক সমস্যায় জর্জরিত। অপরদিকে সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মি আছেন প্রতি লাখে নয়জন। আর আমাদের দেশে প্রতি দুই লাখে রয়েছেন মাত্র একজন মানসিক স্বাস্থ্যকর্মি। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, দীর্ঘ মেয়াদি মানসিক রোগে আক্রান্তরা এক পর্যায়ে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। যেমন বিষণœতায় আক্রান্তদের ১৫ শতাংশই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে জরিপে বেরিয়ে এসেছে। যেকোন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিলে তা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে প্রকাশ করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই হচ্ছে সর্বোত্তম পদক্ষেপ।