দুর্যোগ হ্রাস দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ২:৪৮:৪৩ অপরাহ্ন
জীবন চলার পথে বাঁধা আসতেই পারে; তাই বলে থেমে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। যেখানে বাঁধা আসবে সেখান থেকেই আবার শুরু করতে হবে। -রেদোয়ান মাসুদ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস দিবস। যখন এই দিবসটি পালিত হচ্ছে, তখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশেও বিরাজ করছে বৈরি আবহাওয়া। তাই শরতের বিদায় লগ্নেও প্রচ- গরমে হাপিত্যেশ অবস্থা প্রাণীকুলের। অথচ শরৎ ঋতু বাঙালির কাছে একটি প্রিয় সময়। কারণ শরতে থাকে না গ্রীষ্মের উত্তাপ, মন ও মেজাজে একটা ফুরফুরে ভাব বিরাজ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রতিটি শরতেই প্রকৃতি বিরূপ। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন ছাড়াও শরৎকালে স্বাভাবিক নিয়মেই নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে থাকে। এই সময়ে সাগর থাকে উত্তাল। ঘন ঘন নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। সংঘটিত হয় ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ইত্যাদি। অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাস হচ্ছে দুর্যোগের মাস। আর এই সময়টিতেই পালিত হয় আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস দিবস।
বিশ্ব উত্তপ্ত হচ্ছে। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। দেশের উপকূলীয় বিস্তির্ণ অঞ্চল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মৃদু ও মাঝারি ধরণের ভূমিকম্প হচ্ছে প্রায়ই। যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবী উষ্ণায়নের যে সব বৈরি প্রভাব-প্রতিক্রিয়া স্পট হয়ে ওঠেছে, তা আরও বাড়তে থাকবে দ্রুত গতিতে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের তেমন কোন আশা করা যায় না। বিজ্ঞানিদের মতে- তাপ প্রবাহ, ঝড় বৃষ্টি, ক্রান্তিম-লীয় সামুদ্রিক ঝড় এবং সাগরের জলেচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্বিপাক আরও ঘন ঘন, আরও ব্যাপক এলাকা জুড়ে, আরও মারমুখি প্রচ-তায় ঘটতে থাকবে। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে যে বিপর্যয়ের সম্মুখিন হচ্ছি আমরা, তা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি কী, তা নিয়ে ভাবতে হবে। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের কোন হাত নেই; তবুও এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, মানুষের কিছু অপরিনামদর্শি আচরণের জন্য এইসব দুর্যোগের মাত্রা বাড়ছে। বিজ্ঞানিগণ বলছেন, অব্যাহতভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এই উচ্চতা যদি আরও ২০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায় তবে বিশ্বের সাগর, বেলাভূমি, উপকূল বিশেষ করে কয়েকটি বড় বড় নগরি তলিয়ে যাবে সমুদ্রগর্ভে। এর পাশাপাশি ঘটবে সমুদ্রদূষণ। পৃথিবীর সাগর-মহাসাগরের প্রায় দু’শটি এলাকায় ইতোমধ্যেই দূষণ দেখা দিয়েছে। আর এই দূষণের জন্য দায়ি মানুষেরই স্বেচ্চাচারি আচরণ।
পরিবেশ বিপর্যয়, সমুদ্র দূষণ, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠা- এই সবকিছুর সম্মিলনেই ঘটে চলেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর তা ঠেকানোর জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। যথাযথ পরিকল্পনা নিলে উল্লিখিত অনেক বিপর্যয়ই রোধ করা যায়, কমানো যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এক্ষেত্রে প্রথমেই প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। আর এজন্য বনাঞ্চলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি। সুরক্ষা করতে হবে পাহাড়-টিলা। নদী বা সাগরে শিল্প বা রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। মানুষ যদি সচেতন না হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস তো হবেই না, বরং বাড়তেই থাকবে।