খুদে কল্পগল্প প্যারালাল আর্থ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ২:৩১:৫০ অপরাহ্ন
ইসতিয়াক হোসেন
‘আচ্ছা মিমি, ধর কোনো এক অল্টারনেট টাইমলাইনের প্যারালাল আর্থে তুই আর আমি একই ক্লাসে পড়ি, পাশাপাশি বসে ক্লাস করি। কেমন হতো?’ ফেসবুকে চ্যাট করতে গিয়ে আচমকা প্রশ্ন করে বসে তমাল।
‘কী আর হতো? আমি সারাক্ষণ তোকে খোঁচাতাম কলম দিয়ে। তোর শার্টে দাগাদাগি করতাম! বিরক্ত হলে ধাক্কা মারতাম!’ হাসতে হাসতে উত্তর দেয় মিমি।
‘আর আমি খুব চুপ করে বসে থাকতাম? তোর চুল টানতাম, কানমলা দিতাম!’ তমালের পাল্টা জবাব।
‘হেহ! এত্ত সোজা না! এমন জ্বালানো জ্বালাতাম তোকে যে আমার আশপাশে বসার চিন্তাও করতি না! ক্লাসে আমি বিরক্ত হলে যে থাকে আশপাশে, তাকেই জ্বালাই প্রচুর!’ উত্তর দেয় মিমি।
‘আচ্ছা! আমি কেমন জ্বালাই তোর তো আইডিয়াই নেই!’ তমাল বলে।
‘তুই আমাকে উঠিয়ে দিবি ক্লাসে ঘুমিয়ে গেলে। আর প্রতিদিন তিন গোয়েন্দা নিয়ে আসবি অঙ্ক ক্লাসের জন্য! আই হেট ম্যাথ!’ মিমির আদেশ রীতিমতো!
‘আর আমি ক্লাসে ফেসবুক চালাব, তুই পাহারা দিবি!’ তমালের পাল্টা আদেশ।
‘এটা পারব না! ক্লাস এত চমৎকার জায়গা আর তুই ফেসবুক চালাবি? হুহ! দেব না!’ হুমকি দেয় মিমি।
‘তুই তিন গোয়েন্দা পড়তে পারবি আর আমি ফেসবুক চালালে দোষ?’ তমাল অনুযোগ করে।
মিমি বলে, ‘ওগুলো তো মজার অনেক!’
‘আচ্ছা ঠিক আছে! পরীক্ষায় না পারলে আমি গুগলে উত্তর খুঁজব, তখন পাহারা দিস!’ তমাল বলে।
‘দেখা যাবে। কেমিস্ট্রি স্যার হলে তো কোনো বিজ্ঞানী নিজের তত্ত্ব ব্যাখ্যা দিলেও উনি নম্বর দেবেন না!’ মিমির বিরক্তি। অতঃপর আলাপ করতে করতে অন্য বিষয়ে চলে যায় তাদের ভার্চুয়াল আড্ডা।
রাতে তমাল বিছানায় শুয়ে তারা-উজ্জ্বল আকাশে তাকিয়ে ভাবে, আসলেই কি প্যারালাল আর্থের অস্তিত্ব আছে?
অন্যদিকে প্যারালাল আর্থে:
‘আচ্ছা তমাল, ধর কোনো এক অল্টারনেট টাইমলাইনের প্যারালাল আর্থে তুই আর আমি ভার্চুয়াল বন্ধুর মতো। যোগাযোগ শুধু ফোন আর ফেসবুকেই হয়, আলাদা ক্লাস, আলাদা স্কুলে পড়ি, দেখাও হয় তিন মাসে একবারÍএ রকম। তাহলে হয়তো এখন আমরা ফেসবুকে চ্যাট করছি!’ বলে ওঠে মিমি।
‘উফ্! এই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিগুলো তোর মাথা খেলো! চুপ করে ক্লাস কর! কী সব আজগুবি কথাবার্তা!’ বিরক্ত হয়ে বলল তমাল।
‘দেখ না একটু ভেবে ব্যাপারটা! কেমন হতো না?’ ঘ্যানঘ্যান শুরু করে মিমি।
‘অ্যাই! মিমি আর তমাল, তোমরা সারাক্ষণ ক্লাসে এত কথা বলো কেন? সারাক্ষণ দুষ্টামি আর কথা বলা! যাও, দুজনই ক্লাসের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো!’ রসায়ন স্যার রেগে গেলেন!
খুশিই হলো ওরা! একে তো রসায়নের ক্লাস বিরক্তিকর, তার ওপর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তিটা ভালোই উপভোগ করে তারা।
বাইরে গিয়েই তারা একে অপরকে কথার মারপ্যাঁচে খোঁচাতে শুরু করে।
‘তোরা কি আর জীবনেও বড় হবি না?’ কথাটি শুনে ঘুরে তাকায় তারা। দেখে তাদের প্রিয় কানিজ মিস। দেখে দুজনই খুব বড় করে হাসি দেয়।