মেঘের মধ্যে প্লাস্টিককণা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ২:৩৪:৪৮ অপরাহ্ন
জলের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলে তুমি কোন দিন সাগর পাড়ি দিতে পারবে না। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিপর্যস্ত বৈশ্বিক জলবায়ুর জন্য নতুন একটি দুঃসংবাদ দিলেন বিজ্ঞানিগণ। তাদের নতুন আবিষ্কার হচ্ছে মিঘের ভেতর প্লাস্টিকের কণা। জাপানের বিজ্ঞানিরা গবেষণায় মেঘের ভিতর প্লাস্টিকের অনু বা কণার সন্ধান পেয়েছেন। তারা মনে করছেন এসব প্লাস্টিক কণা জলবায়ুকে প্রভাবিত করছে। বিজ্ঞানিরা পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের কণা সংগ্রহ করে গবেষণা করেন। তারা নয় রকম ভিন্ন ভিন্ন পলিমার দেখতে পান মেঘের কণায়। আর এক রকম রাবারও দেখতে পান।খবরটি একটি জাতীয় দৈনিকের।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে,বাতাস মানুষের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান। আর এই বাতাস দূষিত হচ্ছে নানা কারণে।বিজ্ঞানিদের মতে-অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, উন্নয়ন কর্মকা- এবং দ্রুত নগরায়নের কারণে বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে । বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য, কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থে মিশে থাকা প্লাস্টিক প্রতিনিয়ত মিশছে পরিবেশে। এসব প্লাস্টিক নানা কারণে ভেঙে পরিণত হচ্ছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিকে বা মাইক্রোপ্লাস্টিকে।সাধারণত পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক পদার্থের আহরণকেই প্লাস্টিক দূষণ বলা হয়। যা পরবর্তীতে বন্যপ্রাণি, বন্যপ্রাণির আবাসস্থল, এমনকি মানবজাতির ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না। এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়। আর প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। সাধারণত ৫ মিলিমিটারের ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। অর্থাৎ এক ইঞ্চির প্রায় পাঁচ ভাগ ছোট আকৃতির প্লাস্টিক কণা হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এমন সব অতিক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে, যা খালি চোখে দেখা যায় না। বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের আরেকটি উৎস ফসলি জমিতে ব্যবহৃত সার। এসব সার শুকিয়ে গেলে তাতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক বাতাসে মিশে যায়। এমনকি সিনথেটিক কার্পেট ও কাপড় থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিক বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া, নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের শরীরে এবং রক্তে প্রবেশ করে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মায়ের বুকের দুধেও মাইক্রোপ্লাস্টিক এর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবসভ্যতাকে এক নজিরবিহীন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের সর্বগ্রাসি চরিত্রের বড় উদাহরণ হচ্ছে মেঘের মধ্যে এর উপস্থিতি।গবেষণায় মেঘের পানির প্রতি এক লিটারে ৬.৭ থেকে ১৩.৯ পিস পর্যন্ত প্লাস্টিক পেয়েছেন বিজ্ঞানিরা।
আসল কথা হলো, মাইক্রোপ্লাস্টিক চক্রাকারে বিভিন্ন প্রাণির দেহ ঘুরে মানুষের শরীরে আসলেও কোন প্রাণির পাকস্থলীতেই তা হজম হয় না। আর যখন মাইক্রোপ্লাস্টিক আবহাওয়া ম-লের ওপরে ওঠে যায় এবং অতিবেগুনি রশ্মির তেজস্ক্রিয়তার মুখে পড়ে তখন তারা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।বিজ্ঞানিদের বক্তব্য হচ্ছে,যদি বাতাসে প্লাস্টিক দূষণ সক্রিয়ভাবে সমাধানের পথ না খোঁজা হয় তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি হয়ে উঠবে আরও ভয়াবহ।