গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরতিহীন বিমান হামলায় একদিনেই ১৫১ ফিলিস্তিনি নিহত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ৯:৫২:৫৪ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ৬ষ্ঠ দিনেও তীব্র বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের ওয়াফা নিউজ এজেন্সির বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বত্র ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার হামলায় অন্তত ১৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, শনিবার থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৪৪৭, আর নারী ২৪৮ জন। আহতের সংখ্যা ৬ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে।
নিহতের মধ্যে কতজন বেসামরিক রয়েছেন তা জানাননি কর্মকর্তারা। তবে ত্রাণ কর্মীরা সতর্ক করে বলছেন, ২৩ লাখ অধিবাসীর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে একটি মানবিক বিপর্যয় এগিয়ে আসছে। যা ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহলের সবাইকে আক্রান্ত করবে।
উপত্যকাজুড়ে বিশুদ্ধ পানি নেই। অঞ্চলটির একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বুধবার বন্ধ হয়ে গেছে। রাতের বেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকছে পুরো ছিটমহল।
ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেটের মুখপাত্র নেবাল ফারশাখ বলেছেন, অতীতের লড়াইয়ে সর্বদা বিমান হামলায় কিছু সময় বিরতি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন, একটি মিনিটও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে তো বাড়ছেই।
গাজা শহরের শিফা হাসপাতালে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির প্রতিনিধি দেখেছেন, কীভাবে বিছানার চাদরে ঢাকা একের পর এক মরদেহ ¯্রােতের মতো আসছে। হাসপাতালের কর্মীরা যখন মেঝেতে রক্তের দাগ মুছছেন তখন বোমার শ্র্যাপনেলের আঘাতে আহত শিশুদের নিয়ে আসছেন আত্মীয়রা। হাসপাতালের আশেপাশে তখনও একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটছে।
শনিবার হামাস যোদ্ধাদের হামলার জবাবে এই বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১ হাজার ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইসরায়েল দাবি করে আসছে, তারা শুধু হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বেসামরিক হতাহত এড়ানোর জন্য। কিন্তু অনেক ফিলিস্তিনি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তত আট সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ছয় চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ১১ কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।
চার সন্তানের বাবা ৩৫ বছর বয়সী ইয়ামেন হামাদ বাস করতেন গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বেইত হানুন শহরে। ইসরায়েলি হামলায় তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, অতীতের সব যুদ্ধ ও হামলা দেখেছি আমি। কিন্তু এই যুদ্ধের চেয়ে ভয়াবহ কিছু কখনও দেখিনি।
এই গ্রামটি ইসরায়েলের কাছাকাছি। পাল্টা হামলার শুরুতে যেসব স্থানে আক্রমণ হয় এটি ছিল সেগুলোর একটি। হামাস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এখানকার অনেক সড়ক ও ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
এদিকে, হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে না বলে ইসরায়েল যে হুমকি দিয়েছিল, সেটিতেই অটল রয়েছে বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলে গিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আগের দিনই ইসরায়েলে জরুরি ঐক্য সরকারের ঘোষণা আসে।